বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শ্রমিক দলের মহাসমাবেশে বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহবান আপনারা একটু সতর্ক থাকবেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি অংশ সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ফ্যাসিবাদ-বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে সুপরিকল্পিতবাবে বিরোধ উস্কে দিতে চায়। গণতন্ত্রকামী জনগণের মনে এধরনের বিশ্বাস জন্ম নিতে শুরু করেছে।
আজ (১ মে) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, তাদের কাছে আমাদের আহবান স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার প্রস্তাবনা প্রণয়ন করুন। কোনও রাজনৈতিক দলের আপত্তি নেই। তবে পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ এবং নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত করুন। সুনির্দিষ্টিভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের রুপরেখা ঘোষণা করুন। অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মপরিকল্পনায় পথনকশা গণতন্ত্রকামী জনগণের নিকট সুস্পষ্ট থাকলে জনমনে সন্দেহ, সংশয় কেটে যাবে।
তারেক রহমান বলেন, দেশে এখন প্রতিনিয়ত সংস্কার নিয়ে শোরগোল হচ্ছে। গণ্যমাধ্যমের খবর কিংবা টক শো সবখানেই সংস্কার। কিন্তু এই কর্মযজ্ঞে কৃষক, শ্রমিকের কন্ঠস্বর কোথায়। তারাই তো গ্রামীণ অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। তারা কোথায়, কার কাছে তাদের সমস্যা বা সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবে। কে তাদের প্রতিনিধি?
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা মনে করি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দুঃখ, দুর্দশা, সমস্যা, সম্ভাবনার কথা যাতে রাষ্ট্র ও সরকারের কানে পৌঁছায়— সেজন্য জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, জাতীয় সংসদ ও নির্বাচিত সরকার দরকার। কারণ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সরকার জনগণের কথা শুনতে বাধ্য।
তিনি বলেন, জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্র, রাজনীতি এবং সরকারে সংস্কারের জন্য বাংলাদেশের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সাথে আলোচনা করে বিএনপি ২০২৩ সালেই ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছিলো।
'রাষ্ট্র, রাজনীতির গুণগত সংষ্কারের জন্য যেমন গুণগত সংষ্কার প্রয়োজন – তেমনি জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্য জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন নির্বাচন। বিএনপি মনে করে সংষ্কার ও নির্বাচন উভয়ই প্রয়োজন'- যোগ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
রাখাইনে মানবিক করিডোর দেওয়ার প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন 'সবার আগে দেশের জনগণের স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে।'
তিনি বলেন, 'অভ্যন্তরীণ যুদ্ধে লিপ্ত মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক সাহায্য পৌছানোর জন্য বাংলাদেশকে করিডোর হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে, অন্তর্বর্তী সরকার নাকি নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের সাথে জড়িত এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার কিন্তু জনগণকে জানায়নি। এমনকি জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও কোনো ধরনের আলোচনার প্রয়োজনবোধ করেনি।'
'দেশের জনগণকে না জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে কি-না কিংবা নেওয়া উচিত কি-না এই মুহুর্তে সেই বিতর্ক আমি তুলতে চাই না। তবে দেশের স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ মনে করে, করিডোর দেওয়া না দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসতে হবে জনগণের কাছ থেকে। সিদ্ধান্ত আসতে হবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত পার্লামেন্ট থেকে। এধরনের পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক বিশ্বের দেশগুলোতে এটাই নিয়ম, এটাই রীতি।'
তারেক রহমান আরও বলেন, আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট— বিদেশীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য নয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সবার আগে দেশের জনগণের স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান কিংবা অন্য কোন দেশ নয়— সবার আগে বাংলাদেশ। এটিই হতে হবে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশে জনগণের ভোটে জনগণের চোখে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্যেই বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে অব্যাহত সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। তবে গণতন্ত্রকামী জনগণ মনে করে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি অনির্দিষ্টকালের জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখা যৌক্তিক নয়।
তিনি আরো বলেন, পলাতক স্বৈরাচার যেন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ না পায়— এজন্যই জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরী। ফ্যাসিস্ট কিংবা স্বৈরাচার হওয়ার মন্ত্র – দেশের সংবিধান কিংবা দেশের আইনে লেখা থাকে না। বরং সংবিধান ও আইন না মানার কারণেই ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়। একজন ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী যখন থেকে নিজেকে কিংবা নিজেদেরকে একমাত্র অনিবার্য, অপরিহার্য মনে করে— জনগণের ওপর একক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে শুরু করে তখন থেকেই ফ্যাসিবাদের যাত্রা শুরু হয়।
তারেক রহমান বলেন, কোনও ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর বিনা ভোটে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার সুপ্ত বাসনা, মনের আকাঙ্খা যেন রাষ্ট্র ও সরকারকে ফ্যাসিবাদের প্রতি প্রলুব্ধ করতে না পারে— সেজন্যই জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জাতীয় সংসদ এবং জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা দরকার।
রাজনৈতিক দলগুলোর একমত হওয়া সংস্কার বাস্তবায়ন করে দ্রুত নির্বাচনের দাবি ফখরুলের
মে দিবসের সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সভ্যতা এই পৃথিবী বড় বড় অট্টালিকা সবকিছুর মূলে শ্রমিকদের রক্ত, ঘামের অবদানের মধ্য দিয়ে। আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে অর্জিত সেই দিবসই পালিত হচ্ছে
মানবজাতির মধ্যে সবচেয়ে বঞ্চিত শ্রেণী হচ্ছে শ্রমিক সমাজ। তারা গোটা সভ্যতাকে বাচিয়ে রাখে। উৎপাদন প্রক্রিয়ার পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু শ্রমিক সমাজের জন্য যে কাজ, যে প্রয়োজন– সেটা হয়ে উঠেনি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এসব উপলদ্ধি করে সেসময় গার্মেন্টস চালু করেছিলেন। একইসাথে শ্রমিক রপ্তানির ব্যবস্থা করেছিলেন। গার্মেন্টসসহ নানা শিল্প গড়ে তুলেছিলেন। শ্রমিকদের শিক্ষার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া শ্রম আদালত করেছিলেন।
তিনি আরো বলেন, আজকে আমরা রাজনৈতিকভাবে অস্বাভাবিকতার মধ্যে আছি। আমরা ফ্যাসিস্টের পতন ঘটিয়েছি, কিন্তু এখনো ভোটের মাধ্যমে পার্লামেন্ট গঠন করতে পারেনি। অন্তর্বর্তী সরকারকে বলছি সংস্কারকে দ্রুত ত্বরান্বিত করুন। প্রেসিডেন্ট জিয়া বাকশাল থেকে সংস্কারের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ করেছিলেন। মিডিয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। সুতরাং সংষ্কার আমোদের দাবি। সংস্কার আমাদের সন্তান। এজন্য আমাদের ভাইস চেয়ারম্যান ফ্যাসিবাদের আমলেই ৩১ দফা দিয়েছিলেন
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যেসব সংষ্কারে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করে নির্বাচন দিন। সেগুলো নিয়ে জুলাই চার্টার করে— পার্লামেন্টকে ফাংশনাল করব। আজকে বাংলাদেশের ভবিষ্যত নির্ভর করছে সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর। রাজনৈতিক দলগুলোকে অবজ্ঞা করে এমন কোন চুক্তি করবেন না যেটা রাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়।
সূত্র: টিবিএস
মন্তব্য করুন: