দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর বিষয়ে দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ। তিনি বলেছেন, সার্বিক সক্ষমতা যাচাই করে উপযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর অনুমোদন দেওয়া হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধনের বিষয়ে অংশীজনের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউজিসি চেয়ারম্যান এ কথা বলেন। আজ সোমবার ইউজিসি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় এই সভা।
বর্তমানে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডি করার সুযোগ থাকলেও ১৯৯২ সাল থেকে চালু হওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তা নেই। শিক্ষা-সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এখন কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান তুলনামূলক ভালো। এমনকি কিউএস বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিংয়ে দেশের যে কয়টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান করে নিচ্ছে, সেখানে দেশের কোনো কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামও থাকছে। এ ছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপরিচিত অনেক সাবেক ও বর্তমান শিক্ষক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অধ্যাপনা করছেন। তাঁদের অনেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সময় পিএইচডি গবেষকের তত্ত্বাবধায়ক (সুপারভাইজার) হতে পারলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পারছেন না। তাই গুণমান বিচার করে এবং নির্ধারিত মানদণ্ড নির্ধারণ করে সুপরিচিত অধ্যাপকের তত্ত্বাবধায়নে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর পক্ষে সংশ্লিষ্টদের অনেকেই। তবে এ ক্ষেত্রে গবেষণার মানের সঙ্গে কোনোভাবে আপস করা যাবে না বলেও অভিমত।
দেশে এখন অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১৪। তবে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই ভালো করছে, বলা যাবে না; বরং অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, মানসম্মত শিক্ষার জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার, তার পুরোপুরি নেই এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ইউজিসি চেয়ারম্যান এস এম এ ফায়েজ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সমাজেরই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। সমাজের বিভিন্ন সমস্যা বিশ্ববিদ্যালয়কেও প্রভাবিত করে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সামাজিক সমস্যা নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করে সমস্যার সমাধান বের করতে হবে।
পরিবর্তিত সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষা ও মানসিক অবস্থা গুরুত্বসহকারে অনুধাবন করে তাঁদের প্রত্যাশা পূরণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান ইউজিসি চেয়ারম্যান।
ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, ইউজিসি উচ্চশিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন ও প্রসারে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আলাদাভাবে দেখতে চায় না। ইউজিসি নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ নয়, বরং সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চায়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের দায়িত্বে থাকা সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, যুগের চাহিদা পূরণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সুষ্ঠু পরিচালনার স্বার্থে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. সুলতান মাহমুদ ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ হাসান নাকিব, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক শামস রহমান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক মো. নুরুল ইসলাম, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ডিন অধ্যাপক ইউসুফ হায়দার, বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. সবুর খান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ প্রমুখ।
সোর্স: প্রথম অলো
মন্তব্য করুন: