লেফটেন্যান্ট মোঃ মবিনূর রহমান, বীর প্রতীক, ই বেংগল ২৩ ডিসেম্বর ১৯৮৮ তারিখে বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমী হতে ১৯ বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদী কোর্সের সাথে কমিশন লাভ করেন। তিনি ১০ মে ১৯৯০ তারিখে পার্বত্য চট্টগ্রামে খাগড়াছড়ি রিজিয়নের গুইমারা জোনে ৩৪ ই বেংগল ইউনিটের কোয়ার্টার মাস্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সে সময় উক্ত জোনের বিভিন্ন এলাক
লেফটেন্যান্ট মোঃ মবিনূর রহমান, বীর প্রতীক, ই বেংগল ২৩ ডিসেম্বর ১৯৮৮ তারিখে বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমী হতে ১৯ বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদী কোর্সের সাথে কমিশন লাভ করেন। তিনি ১০ মে ১৯৯০ তারিখে পার্বত্য চট্টগ্রামে খাগড়াছড়ি রিজিয়নের গুইমারা জোনে ৩৪ ই বেংগল ইউনিটের কোয়ার্টার মাস্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সে সময় উক্ত জোনের বিভিন্ন এলাকায় শান্তিবাহিনীর ব্যাপক অপতৎপরতা চালু ছিল। যার ফলে কৌশলগতভাবে সুবিধাজনক স্থানে থেকে আশেপাশের এলাকা নজরদারিতে রাখার লক্ষ্যে ৩৪ ই বেংগলের একটি ক্যাম্প নাইক্কা পাড়ায় স্থানান্তর করার পাশাপাশি কালা পাহাড়ের চূড়ায় নাকরাই নামক দুর্গম স্থানে আরেকটি নতুন ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। উল্লেখ্য, অত্যন্ত দুর্গম নাকরাই ক্যাম্পটিতে হেলিকপ্টারে রেশন সরবরাহ করা হতো। এছাড়া কখনো কখনো নিকটবর্তী সিন্দুকছড়ি ক্যাম্প হতে লিংক টহলের মাধ্যমেও রেশন সরবরাহ করতে হতো।
এমনিভাবে ১০ মে ১৯৯০ তারিখে লেঃ আশিক ও ক্যাপ্টেন সাইফ এর নেতৃত্বে নাকরাই ক্যাম্পে রেশন পৌঁছানোর জন্য দুটি রেশন লিংক টহল পরিচালিত হয়। অপরদিকে রেশন লিংক টহল দুটির ফ্ল্যাংক প্রটেকশনের জন্য নাইক্কাপাড়া ক্যাম্পকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। নাইক্কাপাড়া ক্যাম্পটি ছিল আলফা কোম্পানীর অধিনায়ক মেজর কায়সারের অধীনে। তিনি সাময়িক ছুটিতে থাকার কারণে খন্ডকালীন সময়ের জন্য লেঃ মবিন উক্ত ক্যাম্পের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। যার ফলে ফ্ল্যাংক প্রটেকশনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত টহল দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন লেঃ মবিন।
টহল চলাকালীন নিকটবর্তী একটি পাড়ায় লেঃ মবিন কিছু অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেন। এ সময় পাড়াটিতে অন্য কোন লোকজনই ছিল না। শুধুমাত্র উক্ত পাড়ার কারবারী'কে তিনি আতঙ্কিত অবস্থায় দেখতে পান। কারবারী জানান, পূর্বের রাতে শান্তিবাহিনীর একদল সদস্য পাড়াটিতে চাঁদা সংগ্রহের উদ্দেশ্যে অবস্থান করে এবং পার্শ্ববর্তী কোন স্থানে এখনো তারা অবস্থান করছে। লেঃ মবিন রেশন লিংক টহল দুটির কমান্ডার লেঃ আশিক ও ক্যাপ্টেন সাইফ'কে বিষয়টি অবগত করেন। তারা লেঃ মবিন'কে একই পথে ক্যাম্পে ফেরত না যাওয়ার জন্য উপদেশ দেন। সে অনুযায়ী লেঃ মবিন টহল দলটিকে নেতৃত্ব দিয়ে ভিন্ন পথে নিজ ক্যাম্পে ফেরত যাওয়ার জন্য ১২০০ ঘটিকায় যাত্রা শুরু করেন।
ক্যাম্পে ফেরত যাওয়ার পথটি ছিল উঁচু-নিচু এবং পাহাড় ও জঙ্গলে পরিপূর্ণ। তাছাড়া এই পথে কেউ সচরাচর চলাচল করত না বিধায় টহলটির চলাচল করা ছিল বেশ কষ্টসাধ্য। তদুপরি নিরাপত্তা বিবেচনায় টহল দলটি এ পথেই এগোচ্ছিল। মাঝপথে প্রচন্ড গরম ও জঙ্গলের মধ্য দিয়ে চলাচলের জন্য সকলেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। যার ফলে একটি পাহাড়ের চূড়ায় কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে দুপুর ১৪০০ ঘটিকায় তারা পুনরায় যাত্রা শুরু করে।
টহলটি পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছালে, টহল দলের প্রথম স্কাউট নীচে উত্তর দিকের ঢালুতে দুটি জুম ঘর দেখতে পায় এবং লেঃ মবিন'কে অবগত করে। তৎক্ষণাৎ তিনি পাহাড়ের চূড়া হতে ঘর দুটির অবস্থান ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা অবলোকন করে। তার কাছেও জায়গাটা কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হয়। কেননা তিনি সেখানে একজন নারীকে কর্মরত অবস্থায় দেখতে পান। দুর্গম স্থানে নারীর উপস্থিতি তাকে আরও সন্দিহান করে তুলে। লেঃ মবিন প্রথম ও দ্বিতীয় স্কাউটকে সতর্কতার সাথে জুম ঘরের দিকে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দেন এবং টহল দলের অন্যান্য সদস্যদের সতর্ক করেন।
স্কাউট ঘর দুটির সামনে পৌঁছে প্রথম ঘরটির মধ্যে কি আছে দেখার জন্য উঁকি দেয়ার সাথে সাথে তিনজন অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত, ঘরের ভিতর হতে লাফিয়ে পাহাড়ের নীচে চলে যায়। লেঃ মবিন বিলম্ব না করে লক্ষ্যস্থির করে ফায়ার করেন। সেই সাথে টহল দলের অন্যান্য সকলকে ফায়ার করার নির্দেশ দেন। এ সময় দুষ্কৃতিকারীরা গুলিবিদ্ধ হয় এবং পাহাড়ের পাদদেশে লুকিয়ে পড়ে। অতঃপর লেঃ মবিন এর আদেশে সিপাহী কাজী মোঃ খায়রুল আলম ও সিপাহী ফিলিপ সুরেণ দ্রুত পাহাড়ের নীচে নেমে যায় এবং দুষ্কৃতিকারীদের আটক করেন।
লেঃ মবিন এর বিচক্ষণতা, সাহসিকতা ও যোগ্য নেতৃত্বের ফলে উক্ত অপারেশনে শান্তিবাহিনীর দুইজন দুষ্কৃতিকারী মৃত্যুবরণ করে। এছাড়া অভিযানে ১১৮ রাউন্ড অ্যামোনেশন সহ ১টি এসএমসি, ১০৫ রাউন্ড অ্যামোনেশন সহ ১টি ৭.৬২ মিঃ মিঃ এ্যাসল্ট রাইফেল এবং গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র উদ্ধার হয়।
পরবর্তীতে ১৬ অক্টোবর ১৯৯০ তারিখে তৎকালীন মহামান্য রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান্ট মোঃ মবিনূর রহমান'কে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করেন।
(চলবে)
মন্তব্য করুন: