লেফটেন্যান্ট এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম, বীর প্রতীক, ইবি গত ২৫ ডিসেম্বর ১৯৮৭ তারিখে বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমি হতে ১৭ বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদী কোর্সের সাথে কমিশন লাভ করেন। তিনি ২১ ই বেংগল ইউনিটে এ্যাডজুটেন্ট হিসেবে রাঙ্গামাটি জেলায় কর্মরত ছিলেন।
লেফটেন্যান্ট এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম, বীর প্রতীক, ইবি গত ২৫ ডিসেম্বর ১৯৮৭ তারিখে বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমি হতে ১৭ বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদী কোর্সের সাথে কমিশন লাভ করেন। তিনি ২১ ই বেংগল ইউনিটে এ্যাডজুটেন্ট হিসেবে রাঙ্গামাটি জেলায় কর্মরত ছিলেন। ০৫ অক্টোবর ১৯৯০ তারিখ মাগরিবের নামাজের ঠিক পূর্বে গড়গায়াজ্জাছড়ি আর্মি ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার ক্যাপ্টেন হাবিব ওয়্যারলেস সেটের মাধ্যমে জরুরী ভিত্তিতে যোগাযোগ করতে চায়। তিনি জানান ঝগড়া বিল থেকে সোর্স শান্তিবাহিনী সম্পর্কে কিছু তথ্য নিয়ে ক্যাম্পে এসেছে।
তথ্যানুযায়ী, প্রায়শই রাঙ্গামাটির তবলছড়ি বাজারে সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা চাঁদা আদায়ের জন্য স্থানীয় লোকজনদের নির্যাতন এবং নিপীড়ন করে। সাথে সাথে তরুন লেঃ এস এম সালাহউদ্দিন অভিযানে অংশগ্রহনের দৃঢ় ইচ্ছা প্রকাশ করেন। অধিনায়কের সম্মতিক্রমে সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার রফিক'কে ৯ জন সেনাসদস্য নিয়ে অভিযান দল প্রস্তুত করার নির্দেশ দেন। পরিকল্পনা মত তিনি অভিযান পরিচালনার খুঁটিনাটি বিষয়ে যাবতীয় প্রস্তুতি সূর্যাস্তের পূর্বেই সম্পন্ন করেন।
যাত্রা শুরুর পূর্বে তিনি স্পিড বোট এবং ওয়্যারলেসসহ সবকিছুর সঠিকতা যাচাই করে নেন। চাঁদের আলোয় স্পিড বোটে ইঞ্জিনের সাদা রং যেন দৃষ্টিগোচর না হয় সেজন্য ইঞ্জিনের উপর রেইনকোর্ট ব্যবহার করেন। এভাবে দলটি রাজমনি পাড়া আর্মি ক্যাম্প হতে দুর্বৃত্তদের অবস্থানে পৌঁছায়। এসময় গোপনীয়তা রক্ষার্থে ইঞ্জিন বন্ধ করে বৈঠার সাহায্যে তারা অগ্রসর হতে থাকেন।
প্রায় ৩ ঘণ্টা পরে দলটি এ্যাম্বুশ পরিচালনার জন্য দুই পাশে পাহাড় বেষ্টিত একটি জায়গা খুঁজে পায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী দুর্বৃত্তদের সম্ভাব্য পলায়নের রাস্তায় বাঁধা প্রদানের জন্য দুইটি বিচ্ছিন্নকারী দল মোতায়েন করে। সেইসাথে স্পিডবোট দুটি'কে বোট অপারেটরসহ সার্জেন্ট মোশাররফের তত্ত্বাবধানে জলপথে দূর্বৃত্তদের পলায়ন রোধে প্রস্তুত রাখেন। এরপর তিনি ওয়্যারলেস অপারেটর ও রানার'কে সাথে নিয়ে ছোট একটি আক্রমনকারী দল প্রস্তুত করেন। ভোর ০৪০০ ঘটিকায় শুরু হয় অপেক্ষার প্রহর। ভোরের আলো ফোঁটার সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের নৌযানের চলাচল শুরু হয়। সেইসাথে দিনের আলোয় গোপনীয়তা প্রকাশ পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হচ্ছিলো যা, অভিযানের ব্যর্থতার কারণ হতে পারতো।
তখন তিনি দ্রুত ঘন জংগলে আচ্ছাদিত লক্ষ্যবস্তু এলাকায় আবির্ভুত হন এবং সন্ত্রাসী এলাকায় তল্লাসী শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর সৈনিক আব্দুল্লাহ সামনে কিছুর নড়াচড়া দেখতে পায়। পাহাড়ের লম্বা বুনো ঘাসের আড়ালে অগ্রসর হয়ে লেঃ সালাহউদ্দিন এসময় ৩ জন সশস্ত্র দুর্বৃত্তকে দেখতে পান। ইতিপূর্বে সন্ত্রাসীরা টের পেয়ে দ্রুত নৌকা দ্বারা পারাপার হয়ে পার্শ্ববর্তী ছনের বনে আত্মগোপন করে। সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্র আছে জেনেও তিনি কোন গুলি না করে অতি সংগোপনে ভূমির সঠিক ব্যবহার করে সন্ত্রাসীদের নিকটবর্তী হতে সক্ষম হন। একজন সন্ত্রাসীকে তার রানার দেখামাত্র জাপটে ধরে ফেলে। আরেকজন সন্ত্রাসীর উপর লেঃ এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম নিজেই ঝাঁপিয়ে পড়ে তার এসএমজি টি কেড়ে নেয়। অপর একজন সন্ত্রাসী নিজের রাইফেল ফেলে আত্মসমর্পণ করে। উক্ত অভিযানে ৩ জন দূর্বৃত্তসহ একটি এসএমজি, একটি .৩০৩ রাইফেল ও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র উদ্ধার হয়েছিলো।
পরবর্তীতে ৩০ জানুয়ারি ১৯৯১ তারিখে তৎকালীন মহামান্য রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান্ট এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম'কে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করেন।
(চলবে)
মন্তব্য করুন: