ajbarta24@gmail.com সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
৮ পৌষ ১৪৩১

লেফটেন্যান্ট (পরবর্তীতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল) মোজাফফর আহমেদ, বীর বিক্রম, এনডিসি, পিএসসি

স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রামে বীর সেনানিদের বীরত্বগাঁথা (পর্ব-৩)

ন্যাশনাল ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:১২ এএম
আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ৯:০১ এএম

ছবি, ফেসবুক থেকে

লেফটেন্যান্ট মোজাফফর আহমেদ, বীর বিক্রম, ই বেংগল ২৫ ডিসেম্বর ১৯৭৭ তারিখে বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমি হতে ৫ম স্বল্প মেয়াদী কোর্সের সাথে কমিশন লাভ করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলার রুমা জোন (১৫ ই বেংগল) এ কর্মরত থাকাকালীন ২৩ অক্টোবর ১৯৮০ তারিখে রনিপাড়া ক্যাম্পে গোয়েন্দা সংবাদের উপর ভিত্তি করে তার অধিনায়ক তারসা ছড়ার বান্দরঘোপ এ অবস্থিত শান্তিবাহিনীর অস্থায়ী সাব-জোনাল হেডকোয়ার্টার্স এর উপর রে

লেফটেন্যান্ট মোজাফফর আহমেদ, বীর বিক্রম, ই বেংগল ২৫ ডিসেম্বর ১৯৭৭ তারিখে বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমি হতে ৫ম স্বল্প মেয়াদী কোর্সের সাথে কমিশন লাভ করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলার রুমা জোন (১৫ ই বেংগল) এ কর্মরত থাকাকালীন ২৩ অক্টোবর ১৯৮০ তারিখে রনিপাড়া ক্যাম্পে গোয়েন্দা সংবাদের উপর ভিত্তি করে তার অধিনায়ক তারসা ছড়ার বান্দরঘোপ এ অবস্থিত শান্তিবাহিনীর অস্থায়ী সাব-জোনাল হেডকোয়ার্টার্স এর উপর রেইড করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। উক্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী ২ জন অফিসার, ১ জন জেসিও এবং ৩৯ জন অন্যান্য পদবীর সেনাসদস্যের সমন্বয়ে গঠিত একটি টহল দল ২৩ অক্টোবর ১৯৮০ তারিখ ২২০০ ঘটিকায় রনিপাড়া ক্যাম্প ত্যাগ করে।

দূর্গম পাহাড়ী পথ পাড়ি দিয়ে টহল দলটি ফরোয়ার্ড এ্যাসেম্বলি এরিয়ায় ২৪ অক্টোবর ১৯৮০ তারিখ ভোর ০৪০০ ঘটিকায় পৌছায়। ফরোয়ার্ড এ্যাসেম্বলি এরিয়ায় পৌঁছানোর পরে লেফটেন্যান্ট মোজাফফর এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এফ এম নূর উদ্দিন, পিএসসি তাকে ১ জেসিও, ৩ জন এনসিও, ১ জন ল্যান্স নায়েক ও ২ জন সিপাহীর সমন্বয়ে লক্ষ্যবস্তু পর্যবেক্ষণ ও দরকার হলে শান্তি বাহিনীর নিকটবর্তী হয়ে আক্রমন করার নির্দেশ প্রদান করেন।

অধিনায়কের নির্দেশ অনুসারে লেফটেন্যান্ট মোজাফফর আহমেদ দক্ষতার সাথে ভূমির সঠিক ব্যবহারে করে সন্তর্পনে লক্ষ্যবস্তুর দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। যাওয়ার রাস্তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং দুর্গম ছিল, যে কোন সময় শত্রুর গুলি দ্বারা তারা আক্রান্ত হতে পারতেন। লক্ষ্য বস্তুর ৫০০ গজ দুরত্বের মধ্যে পৌছে তিনি বুঝতে পারলেন, যদি টার্গেট এলাকার আরো সন্নিকটে পৌছানো যায় তবেই এই জনবল দ্বারা একমাত্র সফল অপারেশন পরিচালনা করা সম্ভব। এসময় তিনি ওয়্যারলেসের মাধ্যমে অধিনায়কের সাথে যোগাযোগ পূর্বক চুড়ান্ত অভিযান পরিচালনার অনুমতি গ্রহণ করেন। অনুমতি পাওয়ার সাথে সাথে ২ জনকে পাহারায় রেখে বাকি ৫ জন জনবল নিয়ে টার্গেটের ১০ গজের মধ্যে পৌছাতে তিনি সক্ষম হন। এ এক দুঃসাহসিক কাজ ছিল যা, তারা নির্ভয়ে সম্পন্ন করেছিলেন। ভীতসন্ত্রস্ত হলে টার্গেটের এত সন্নিকটে পৌছানো সম্ভব হতো না।

লক্ষ্যবস্তু এলাকায় তারা একটি জুমঘর দেখতে পান। ঘরটি খুঁটির উপর হওয়ায় মাচান ঘরের মতো লাগছিল। এসময় তিনি অতি সন্নিকটে দাঁড়িয়ে থাকা শান্তিবাহিনীর ২ জন প্রহরীদের অস্ত্রসহ দেখতে পান। রেইড পার্টি যখন লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমনের জন্য উপরে উঠছিল তখন শান্তিবাহিনীর প্রহরীরা টের পেয়ে যায়। তারা সেনাবাহিনীর টহলের উপর এসএমজি'র গুলি বর্ষন শুরু করে। শান্তিবাহিনীর বাকি সদস্যরা প্রহরীর গুলির কাভারে পালাতে শুরু করে। এসময় বিন্দুমাত্র কালক্ষেপণ না করে টহল দলটিও দুষ্কৃতিকারীদের উপর গুলি বর্ষন করে। টার্গেটটির সম্মুখভাগে বাঁশের বেড়া আর পিছন দিক খোলা থাকায় কয়েকজন শত্রু পালিয়ে যায়। এই অপারেশনে ৩ জন দুস্কৃতিকারী ঘায়েল হয়। সেইসাথে ৬ জন আটক হয়। ঘটনাস্থলে শান্তিবাহিনীর রেশন স্টোরসহ প্রচুর অস্ত্রসস্ত্র ও গোলাবারুদ পাওয়া যায়। এছাড়াও ইতোপূর্বে আদরাকছড়া এলাকায় দুস্কৃতিকারীদের এ্যাম্বুশে পরে হারিয়ে যাওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদের অনেকাংশই উদ্ধার করা সম্ভব হয়। টার্গেটের এত সন্নিকটে পৌছে পরিচালিত এই আক্রমণটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর একটি দৃষ্টান্তমূলক অপারেশনাল সফলতা।


পরবর্তীতে ০১ নভেম্বর ১৯৮১ তারিখে তৎকালীন মহামান্য রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান্ট মোজাফফর আহমেদ কে বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করেন।

(চলবে)

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর