ajbarta24@gmail.com মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল ২০২৫
১৮ চৈত্র ১৪৩১

গ্রীষ্ম মৌসুমেই বাংলাদেশ থেকে আম আমদানি করবে চীন

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৮ মার্চ ২০২৫ ১৫:০৩ পিএম

ফাইল ছবি

আবেদনের ছয় বছর পর চীনে আম রপ্তানির সুযোগ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের। আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমেই দেশটিতে আম রপ্তানির দ্বার খুলতে পারে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

চীনে যেকোনো খাদ্যপণ্য রপ্তানি করার ক্ষেত্রে দেশটির জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে অব কাস্টম অব চায়না (জিএসিসি) থেকে নিবন্ধন নিতে হয়। জিএসিসি গত বছরের জুলাইয়ে আম রপ্তানির নিবন্ধন দিয়েছে। তবে কাঁঠাল ও পেয়ারা রপ্তানির অনুমোদন এখনো দেয়নি।

চীনে কাঁঠাল ও পেয়ারা রপ্তানির জন্য জিএসিসি থেকে নিবন্ধন নেওয়ার আলোচনা সম্প্রতি নতুন করে শুরু হয়েছে। আরও পণ্য অর্থাৎ পেয়ারা, আলু, সয়ামিল এবং সুগন্ধি চালও রপ্তানির তালিকায় আছে। এগুলোর বিষয়ে অবশ্য খুব অগ্রগতি নেই বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চীনে আমসহ কিছু কৃষিপণ্য রপ্তানির অনুমোদন চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল ২০১৯ সালে। চীন সরকার এমনিতেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত দিতে অনেক সময় নেয়। এরই মধ্যে শুরু হয় কোভিড-১৯ মহামারির প্রকোপ। এ দুটি কারণে শুধু আমের ব্যাপারে প্রক্রিয়া শেষ হতেই সময় লেগে যায় ছয় বছরের বেশি।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ২০ মার্চ এক ব্রিফিংয়ে বলেন, বাংলাদেশ থেকে আম, কাঁঠাল ও পেয়ারা আমদানি করবে চীন। বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সম্প্রতি ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে এ আগ্রহের কথা জানিয়েছেন।

শফিকুল আলম আরও বলেন, বাংলাদেশ থেকে আম, কাঁঠাল ও পেয়ারা আমদানি করার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা আগেই চীন সরকারকে অনুরোধ করেছিলেন। চীন এখন বাংলাদেশ থেকে এই তিন ধরনের ফল আমদানি করতে খুবই আগ্রহী। এর মধ্য দিয়ে চীনে পণ্য রপ্তানির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

চীনের একটা দল বাংলাদেশ সফর করে যে ধারণা দিয়ে গেছে তাতে মনে হয়, বাংলাদেশি আম ও কাঁঠালের স্বাদ তাদের খুব প্রিয়। রপ্তানি হওয়ার তালিকায় থাকা বাকি পণ্যগুলোও রপ্তানির ব্যাপারে কাজ চলছে। দেখা যাক, আমরা খুব আশাবাদী
মো. আনোয়ার হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)
আজ শুক্রবার বাংলা চৈত্র মাসের ১৪ তারিখ। দেড় মাস পর আসছে জ্যৈষ্ঠ মাস। সে সময় আম-কাঁঠালের মৌসুম শুরু হয়।

বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিসিআই) সাবেক সাধারণ সম্পাদক মামুন মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের আম-কাঁঠালের স্বাদ চীনাদের পছন্দের। আমরা আশা করছি আগামী মৌসুমে শুধু আম নয়, কাঁঠালও রপ্তানি করা যাবে চীনে। একবার রপ্তানি করা শুরু করলে বছর বছর এটা বাড়বে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের আশায় তখন বাণিজ্যিকভাবেও উৎপাদন বাড়বে।’

জানা গেছে, আম-কাঁঠাল আমদানি করার অংশ হিসেবে চীনের ব্যবসায়ীদের একটি দল গত বছর বাংলাদেশ ঘুরে গেছে। দুই সপ্তাহের মতো ছিল দলটি। রাজশাহী অঞ্চলে গিয়ে দলের সদস্যরা আম উৎপাদকদের দেখিয়ে গেছেন রপ্তানির জন্য কীভাবে প্যাকেজিং করতে হবে। চীনের অনুদানে দেশে আমের জন্য একটি পরীক্ষাগার (ল্যাব) হওয়ার কথা রয়েছে।

চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন গত বছরের সেপ্টেম্বরে পররাষ্ট্রসচিব জসীম উদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এরপর পররাষ্ট্রসচিব বলেছিলেন, ‘চীনের বাজারে আম রপ্তানির সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে। দুই দেশের বন্ধুত্বের স্মারক হিসেবে আমি একসঙ্গে কয়েকটি পণ্যের প্রবেশাধিকার চীনের বাজারে চেয়েছিলাম। কিন্তু চীন একটা একটা করে পণ্য ওদের বাজারে ঢুকতে দেয়।’

অন্য পণ্যগুলো রপ্তানির কী অবস্থা—জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, চীনের আমদানিকারকদের একটা পর্যবেক্ষণ হচ্ছে আলু উৎপাদনের খরচ বেশি পড়ে, ফলে দামও বেশি পড়ে। আলুর কিছু নমুনা নিয়ে গিয়েছিলেন সম্ভাব্য আমদানিকারকেরা। পরীক্ষা করে দেখে পরে তাঁরা জানিয়েছেন, দাম ছাড়াও বাংলাদেশি আলুর গুণগত মান এখনো সহনীয় পর্যায়ে আসেনি।

আর সুগন্ধি চালের ব্যাপারে বাংলাদেশের নীতিগত সিদ্ধান্তকে দায়ী করেন চীনের ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কখনো রপ্তানির অনুমোদন দয়, আবার কখনো হঠাৎ তা বন্ধ করে দেয়। চীনা চালের বাজার মূলত ভারত ও পাকিস্তানের দখলে রয়েছে।

জানতে চাইলে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘চীনের একটা দল বাংলাদেশ সফর করে যে ধারণা দিয়ে গেছে তাতে মনে হয়, বাংলাদেশি আম ও কাঁঠালের স্বাদ তাদের খুব প্রিয়। রপ্তানি হওয়ার তালিকায় থাকা বাকি পণ্যগুলোও রপ্তানির ব্যাপারে কাজ চলছে। দেখা যাক, আমরা খুব আশাবাদী।’

সূত্র: প্রথম আলো

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর