[email protected] মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
১৫ বৈশাখ ১৪৩২

এক সন্তানের দুই জন্ম—মায়ের সাহস আর চিকিৎসার মিরাকল!

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৬ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:০৪ পিএম

ফাইল ছবি

যুক্তরাজ্যে ঘটেছে এক নজিরবিহীন ও চমকপ্রদ চিকিৎসা-ঘটনা, যেখানে একটি শিশু দুবার জন্মগ্রহণ করেছে—একবার চিকিৎসার প্রয়োজনে এবং পরবর্তীতে প্রকৃত অর্থে পৃথিবীর আলো দেখেছে।

বিরল এই অভিজ্ঞতা পেরিয়ে আসা মা লুসি জন র‍্যাডক্লিফ ও তার সন্তান র‍্যাফার্টি আইজ্যাক এখন সুস্থ এবং এই সাফল্যের জন্য চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতায় ভরপুর।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি মেইল তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩২ বছর বয়সী লুসি যখন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা, তখন একটি নিয়মিত আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষায় ধরা পড়ে তার ডিম্বাশয়ের ক্যানসার। চিকিৎসকরা জানান, সন্তান জন্মের পর চিকিৎসা শুরু করলে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল, যা লুসির জীবনকে চরম ঝুঁকিতে ফেলত।

গর্ভাবস্থার ইতোমধ্যে কয়েকমাস পার হয়ে যাওয়ায় সাধারণ পদ্ধতিতে সার্জারি করা ছিল অসম্ভব। এই কঠিন পরিস্থিতিতে শল্যচিকিৎসক ড. সোলেইমানি মাজেদের নেতৃত্বে একদল চিকিৎসক একটি জটিল এবং উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতির সিদ্ধান্ত নেন। বিশ্বজুড়ে যেটি হাতে গোনা কয়েকবারই সম্পন্ন হয়েছে।

‘প্রথম জন্ম’ – চিকিৎসার প্রয়োজনে শিশুর শরীর বাইরে আনা : অক্টোবরে, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লুসির জরায়ু ও গর্ভস্থ শিশুকে তার শরীর থেকে অস্থায়ীভাবে সরিয়ে নেওয়া হয়, যাতে ক্যানসার অপসারণ করা সম্ভব হয়। সফলভাবে অস্ত্রোপচারের পর, জরায়ু পুনরায় স্থাপন করা হয় লুসির দেহে।

‘দ্বিতীয় জন্ম’ – পৃথিবীতে আগমন : এরপর লুসি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং কয়েক মাস পরে, জানুয়ারিতে শিশুটি প্রকৃতপক্ষে ভূমিষ্ঠ হয়। শিশুটির নাম রাখা হয় র‍্যাফার্টি আইজ্যাক। জন্মের পরপরই এই দম্পতি সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে তাদের জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসক ড. মাজেদকে ধন্যবাদ জানান। আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন চিকিৎসক নিজেও।

লুসি বলেন, আল্ট্রাসাউন্ডের আগে তিনি ক্যানসারের কোনো লক্ষণ টের পাননি। তাই এভাবে সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার সুযোগ পাওয়াটাকে তিনি ভাগ্য হিসেবে দেখছেন। লুসি ও তার স্বামী অ্যাডাম বিশ্বাস রেখেছিলেন চিকিৎসকদের ওপর এবং সেই বিশ্বাসই তাদের এক অভাবনীয় জয় এনে দেয়।

অ্যাডাম বলেন, এত সংগ্রামের পর যখন আমরা র‍্যাফার্টিকে কোলে নিই, সেটি ছিল আমাদের জীবনের সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্ত।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর প্রায় সাত হাজার নারী ডিম্বাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হন, যাদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের ক্ষেত্রেই রোগ ধরা পড়ে দেরিতে। ফলে বছরে প্রায় চার হাজারের বেশি নারী এ রোগে মৃত্যুবরণ করেন। লুসির মতো ঘটনা তাই শুধুই বিরল নয়, বরং চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক অসাধারণ দৃষ্টান্তও বটে।

এই গল্প কেবল একটি শিশুর ‘দুবার জন্মের’ ঘটনা নয়—এটি একজন মায়ের সাহস, একজন চিকিৎসকের নিষ্ঠা এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক যুগান্তকারী সফলতার প্রতীক।

সোর্স: কালবেলা

 

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর