ajbarta24@gmail.com বৃহঃস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫
২৭ চৈত্র ১৪৩১

বৃষ্টিবিহীন শহরে বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাবে কুয়াশা

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:০২ পিএম

সংগৃহীত

একটি সূক্ষ্ম জাল খুঁটির মধ্যে টানিয়ে দেওয়া হয়। যখন আর্দ্র কুয়াশার মেঘ এটি অতিক্রম করে, তখন ক্ষুদ্র পানির কণা জালে জমা হয় এবং পরে তা পাইপ ও সংরক্ষণ ট্যাঙ্কের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়।

বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্ক শহরগুলোর জন্য বিশুদ্ধ পানির সংকট একটি বড় সমস্যা। তবে চিলির একদল গবেষক জানিয়েছেন, কুয়াশা থেকে পানীয়জল সংগ্রহ করা সম্ভব হলে শুষ্ক শহরগুলোর জন্য তা হতে পারে এক গুরুত্বপূর্ণ সমাধান। খবর বিবিসির।

তারা দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় মরু শহর আল্টো হসপিসিওতে এ পদ্ধতির সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা করেছেন। অঞ্চলটিতে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত মাত্র ৫ মিলিমিটার।

গবেষণার প্রধান, ইউনিভার্সিদাদ মায়রের ড. ভার্জিনিয়া কার্টার গ্যাম্বেরিনি বলেন, অনেক শহরের মতো এখানেও সামাজিক সমস্যা প্রকট। দারিদ্র্যের কারণে অনেক বাসিন্দার বিশুদ্ধ পানির সংযোগ নেই।

শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অনেকে ট্রাকযোগে সরবরাহ করা পানির ওপর নির্ভরশীল। তবে গবেষকদের মতে, শহরের পাহাড়ি এলাকায় ঘন কুয়াশা তৈরি হওয়া সত্ত্বেও তা এখনো কাজে লাগানো হয়নি।

কুয়াশা থেকে কীভাবে পানি সংগ্রহ করা হয়?

পদ্ধতিটি বেশ সহজ—একটি সূক্ষ্ম জাল খুঁটির মধ্যে টানিয়ে দেওয়া হয়। যখন আর্দ্র কুয়াশার মেঘ এটি অতিক্রম করে, তখন ক্ষুদ্র পানির কণা জালে জমা হয় এবং পরে তা পাইপ ও সংরক্ষণ ট্যাঙ্কের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়।

এ পদ্ধতি লাতিন আমেরিকার গ্রামীণ এলাকাগুলোতে কয়েক দশক ধরে সীমিত পরিসরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বর্তমানে সাহারা মরুর প্রান্তে মরক্কোতে অন্যতম বৃহৎ কুয়াশা পানি সংগ্রহ প্রকল্প চালু রয়েছে।

তবে ড. কার্টারের মতে, এখন 'নতুন যুগের' বড় পরিসরের কুয়াশা সংগ্রহ ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব, যা নগরবাসীর জন্য টেকসই ও নিরবচ্ছিন্ন পানির উৎস হতে পারে।

তার দল স্যাটেলাইট চিত্র ও আবহাওয়া পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করে নির্ধারণ করেছেন, প্রশান্ত মহাসাগরের ওপর তৈরি হওয়া কুয়াশার মেঘ নিয়মিতভাবে শহরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, যা স্থানীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পানির সংকট দূর করতে পারে।

গবেষকরা হিসাব করে দেখিয়েছেন,

  • প্রতিদিন প্রতি বর্গমিটার জাল থেকে গড়ে ২ দশমিক ৫ লিটার পানি সংগ্রহ করা সম্ভব
  • ১৭ হাজার বর্গমিটার জাল স্থাপন করা হলে সাপ্তাহিক ৩ লাখ লিটার পানির চাহিদা মেটানো সম্ভব, যা বর্তমানে ট্রাকে সরবরাহ করা হয়
  • মাত্র ১১০ বর্গমিটার জাল দিয়ে শহরের সবুজায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ সম্ভব
  • কুয়াশার পানি ব্যবহার করে মাটিবিহীন হাইড্রোপনিক কৃষির মাধ্যমে মাসে ১৫ থেকে ২০ কেজি শাকসবজি উৎপাদন করা যেতে পারে

আল্টো হসপিসিও অবস্থিত আতাকামা মরুর কিনারায়, যা পৃথিবীর অন্যতম শুষ্কতম অঞ্চল। এখানে বৃষ্টিপাত প্রায় হয় না। ফলে শহরগুলোর প্রধান পানির উৎস হচ্ছে ভূগর্ভস্থ জলাধার, যা হাজার বছর আগের বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে রেখেছে।

কিন্তু নগরায়ন, খনন শিল্প ও শিল্পোৎপাদনের কারণে এ জলাধারগুলোর ওপর চাপ বাড়ছে। ফলে বিকল্প ও টেকসই পানির উৎস খোঁজা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন গবেষকরা।

ড. গ্যাম্বেরিনি বলেন, 'চিলি সমুদ্রকুয়াশার জন্য উপযোগী দেশ, কারণ পুরো দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে অবস্থিত এবং পাহাড়ি ভূপ্রকৃতির কারণে এখানে কুয়াশার প্রবাহ বেশি হয়।'

তাদের গবেষক দল বর্তমানে পুরো দেশের জন্য একটি 'কুয়াশা সংগ্রহ মানচিত্র' তৈরি করছে, যা পানির সংকট মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে।

ড. কার্টার বলেন, 'মেঘ থেকে পানি সংগ্রহের এই পদ্ধতি শহরগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা বাড়াবে এবং বিশুদ্ধ পানির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।'

সোর্স: The Business Standard

 

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর