[email protected] বৃহঃস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
২৬ আষাঢ় ১৪৩২

বিশ্ব বদলাতে যেভাবে ‘পাগল তত্ত্ব’ ব্যবহার করছেন ট্রাম্প!

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৮ জুলাই ২০২৫ ১৬:০৭ পিএম

ফাইল ছবি

ইরানে হামলার বিষয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রও কি যোগ দেবে কিনা—এই প্রশ্নে গত মাসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, 'আমি করতেও পারি। আবার নাও বা করতে পারি। আমি কী করব তা কেউই জানে না। '

অর্থাৎ তিনি বিশ্বকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছিলেন যে আলোচনার জন্য ইরানকে দুই সপ্তাহের ছাড় দেওয়া হয়েছে। এবং তারপরেও তিনি বোমা হামলা করেন। এখান থেকেই একটি প্যাটার্ন স্পষ্ট হয়ে উঠছে: ট্রাম্পের বিষয়ে সবচেয়ে অনুমানযোগ্য বিষয় হলো তার অননুমানযোগ্যতা। তিনি তার মন পরিবর্তন করেন। তিনি স্ববিরোধী কথা বলেন। তার মধ্য কোনো ধারাবাহিকতা নেই। আর এই অননুমানযোগ্যতাকেই তিনি রাজনৈতিক ও কৌশলগত অস্ত্রে পরিণত করেছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা একে বলছেন ম্যাডম্যান থিওরি বা 'পাগলাটে তত্ত্ব’। 

ম্যাডম্যান থিওরি কী?

এটি এমন একটি তত্ত্ব যেখানে একজন বিশ্বনেতা তার প্রতিপক্ষকে এটা বিশ্বাস করাতে চান যে, তিনি মানসিকভাবে যেকোনো কিছু করতে সক্ষম এবং তার আচরণ সম্পূর্ণ অনির্দিষ্ট। এর মূল উদ্দেশ্য হলো প্রতিপক্ষকে ভয় দেখিয়ে ছাড় আদায় করা বা সুবিধা আদায় করা। সফলভাবে প্রয়োগ করা গেলে এটি এক ধরনের জবরদস্তির কৌশল হতে পারে।

ট্রাম্প বিশ্বাস করেন যে এই কৌশল কাজে দিচ্ছে এবং আমেরিকার মিত্রদের তিনি যেখানে চান, সেখানেই আনতে পারছেন।

লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিকসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক পিটার ট্রুবোভিৎজ বলছেন, "ট্রাম্প একটি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত নীতি নির্ধারণী ব্যবস্থা তৈরি করেছেন, যা সম্ভবত রিচার্ড নিক্সনের পর পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কেন্দ্রীভূত।  

তিনি আরও বলেন, "এর ফলে নীতিগত সিদ্ধান্তগুলো ট্রাম্পের চরিত্র, তার পছন্দ এবং তার মেজাজের ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।"

ট্রাম্প তার এই অননুমানযোগ্যতাকে একটি রাজনৈতিক মতবাদের স্তরে উন্নীত করেছেন। এখন তার এই ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যই আমেরিকার পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতিকে চালনা করছে এবং বিশ্বের আকার পরিবর্তন করে দিচ্ছে।

ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদের রাষ্ট্রপতি পর্ব শুরুই করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে স্বাগত জানিয়ে এবং আমেরিকার মিত্রদের আক্রমণ করে। তিনি কানাডাকে অপমান করে বলেছেন,  দেশটির আমেরিকার ৫১তম অঙ্গরাজ্য হওয়া উচিত।

তিনি বলেছেন, আমেরিকার মিত্র ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গ্রিনল্যান্ডকে সংযুক্ত করার জন্য সামরিক শক্তি ব্যবহারের কথা বিবেচনা করতে তিনি প্রস্তুত। এমনকি পানামা খালের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ আমেরিকার হাতে ফিরিয়ে আনা উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।

ন্যাটো সনদের আর্টিকেল ৫ অনুযায়ী, প্রতিটি সদস্য দেশ অন্য যেকোনো সদস্যকে রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ট্রাম্প আমেরিকার সেই প্রতিশ্রুতিকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন। ব্রিটেনের সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব বেন ওয়ালেস ঘোষণা করেছেন, "আমার মনে হয়। আর্টিকেল ৫ এখন লাইফ সাপোর্টে আছে। "কনজারভেটিভ অ্যাটর্নি জেনারেল ডমিনিক গ্রিভ বলেছেন, "আপাতত, ট্রান্স-আটলান্টিক জোটের সমাপ্তি ঘটেছে’।

 ফাঁস হওয়া একাধিক টেক্সট মেসেজে ইউরোপীয় মিত্রদের প্রতি ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসের চরম অবজ্ঞার সংস্কৃতি প্রকাশ পেয়েছে।

ট্রাম্পের এই অপ্রত্যাশিত আচরণ, এই অনিশ্চয়তা—যেকোনো সময় দৃশ্যপট পাল্টে দিতে পারে। আর ইউরোপ ধীরে ধীরে যেন সেটিই মেনে নিচ্ছে—তারা আর আগের মতো আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা অঙ্গীকারের ওপর ভরসা করতে পারছে না।

এই দিক থেকে দেখলে, ট্রাম্পের 'অপ্রত্যাশিত নীতি'—যা তার ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ হোক বা সচেতন কৌশল—অন্তত কিছু ক্ষেত্রে যে কার্যকর হয়েছে, তা তো স্পষ্ট বটেই। 

সোর্স: dbcnews

 

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর