ajbarta24@gmail.com বৃহঃস্পতিবার, ৩ এপ্রিল ২০২৫
১৯ চৈত্র ১৪৩১

‘উয়েফা মাফিয়া’ আর ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’— প্রতিবাদের মঞ্চে পরিণত হলো চ্যাম্পিয়নস লিগ

যেভাবে প্রতিবাদের মঞ্চ হয়ে‌ ‌‌‍‍উঠলো ‘উয়েফা কনফারেন্স লিগ’


প্রকাশিত: ০২ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:১০ পিএম

‘উয়েফা কনফারেন্স লিগ’ : ফাইল ছবি

ফুটবল ম্যাচ মানেই তো উন্মাতাল গ্যালারি, আর তার সঙ্গে মিশে থাকা হাসি-কান্না এবং প্রতিবাদের নানা গল্প। সেই গল্পগুলো প্রকাশের সামষ্টিক ধরনকেই মূলত বলা হয় ‘তিফো’। সেটা হতে পারে বিশালাকারের ব্যানার, মোজাইক বা সমর্থকদের একসঙ্গে করা কোরিওগ্রাফ। প্রতিপক্ষ দলের মনোবল ভেঙে দিতে এবং নিজ দলকে উজ্জীবিত করতে নানা ধরনের তিফোর ব্যবহার করে থাকেন কট্টরপন্থী সমর্থক গোষ্ঠী।

ফুটবল ম্যাচ মানেই তো উন্মাতাল গ্যালারি, আর তার সঙ্গে মিশে থাকা হাসি-কান্না এবং প্রতিবাদের নানা গল্প। সেই গল্পগুলো প্রকাশের সামষ্টিক ধরনকেই মূলত বলা হয় ‘তিফো’। সেটা হতে পারে বিশালাকারের ব্যানার, মোজাইক বা সমর্থকদের একসঙ্গে করা কোরিওগ্রাফ। প্রতিপক্ষ দলের মনোবল ভেঙে দিতে এবং নিজ দলকে উজ্জীবিত করতে নানা ধরনের তিফোর ব্যবহার করে থাকেন কট্টরপন্থী সমর্থক গোষ্ঠী।

উয়েফা কনফারেন্স লিগে লেগিয়া ওয়ারশ ও অ্যাস্টন ভিলার ম্যাচে দেখা গিয়েছিল সেই তিফো। সেদিন ওয়ারশর পোলিশ আর্মি স্টেডিয়ামে লেগিয়ার ‘আলট্রাস’–সমর্থকেরা যে তিফোটি নিয়ে এসেছিলেন, সেখানে ছিল একটি গরিলার ছবি এবং তার নিচে আলাদাভাবে লেখা ছিল—‘জঙ্গলে স্বাগতম’। এমন ছবি ও লেখা নিজ দলকে যতটা আত্মবিশ্বাসী করে তোলে, তেমনি প্রতিপক্ষের শিরদাঁড়ায় বইয়ে দিতে পারে আতঙ্কও।

একই ম্যাচে ফিলিস্তিনিদের মুক্তির বার্তা নিয়ে হাজির হয়ে নজর কেড়েছেন সেল্টিক–সমর্থকেরাও।


স্কটিশ ক্লাব সেল্টিকের বিপক্ষে ঘরের মাঠে গতকাল রাতে রীতিমতো রায়ট চালিয়েছে ডর্টমুন্ড। তবে স্বাগতিকদের ৭-১ গোলের জয় ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে এখন বিশালাকার একটি প্রতিবাদী তিফো। সিগন্যাল ইদুনা পার্কে ম্যাচ শুরুর আগেই মূলত দৃশ্যটির অবতারণা।

ডর্টমুন্ডের রং হলুদ ও কালোর মিশেলে সেই তিফোর ওপরে লেখা —‘উয়েফা মাফিয়া’। গ্যালারিতে আরেকটু ওপরের সারিতে দেখা গেল আরও একটি ব্যানার। তাতে লেখা, ‘খেলা নিয়ে তোমাদের কোনো ভাবনা নেই, তোমাদের ভাবনায় শুধু টাকা।’

বিলিওনিয়ারদের কাছ থেকে খেলাকে পুনরুদ্ধার করার এই ডাক ইউরোপিয়ান ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফার স্বাভাবিকভাবেই পছন্দ হয়নি। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উয়েফা তদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছে বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমসের ক্রীড়াভিত্তিক ওয়েবসাইট দ্য অ্যাথলেটিক। উয়েফা অবশ্য আগেই ক্লাবগুলোর জন্য ‘মাফিয়া’ শব্দ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। এই শব্দকে তারা ‘উসকানিমূলক ও আক্রমণাত্মক’ বলে বিবেচনা করে।

এর আগে ২০২২ সালের মার্চে মার্শেইকে ২০ হাজার ইউরো জরিমানা করা হয়েছিল ‘উয়েফা মাফিয়া’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করার কারণে। উয়েফা কনফারেন্স লিগে কারাবাগের বিপক্ষে প্লে-অফ ম্যাচে এমন একটি ব্যানার নিয়ে হাজির হয়েছিল মার্শেই সমর্থকেরা।

গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের বিপক্ষে ম্যাচের সময় নকল টাকা, নকল সোনার বার এবং টেনিস বল ছুড়ে দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিল তারা। সে সময় উয়েফার সমালোচনা করে বেশ কিছু ব্যানার নিয়েও হাজির হতে দেখা গিয়েছিল ডর্টমুন্ড সমর্থকদের। এই ঘটনার পর মাঠে জিনিসপত্র ছোড়ার অভিযোগে ক্লাবটিকে ৭ হাজার ৩৭৫ ইউরো জরিমানা করা হলেও অ্যান্টি-উয়েফা ব্যানারের জন্য কোনো শাস্তি দেওয়া হয়নি।

যদিও জরিমানা বা শাস্তি কোনোটাই দমাতে পারেনি এই সমর্থকদের। এমনকি নিউক্যাসল ম্যাচে ব্যবহার করা দুটি ব্যানার মঙ্গলবার রাতে সেল্টিকের বিপক্ষে ম্যাচেও দেখা গেছে। ডর্টমুন্ড সমর্থকদের নিয়ে আসার ব্যানারগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে নজর কেড়েছে ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো, পিএসজি সভাপতি নাসের আল খেলাইফি এবং জুভেন্টাসের সাবেক চেয়ারম্যান আন্দ্রেয়া আনিয়েল্লিকে নিয়ে বানানো একটি ব্যানার।

শুধু ডর্টমুন্ড সমর্থকদের উয়েফাবিরোধী প্রচারণা নয়, একই দিন দৃষ্টি কেড়েছে সেল্টিক–সমর্থকদের ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ানোর ঘটনাও। আলোকশিখায় নিজেদের রাঙিয়ে ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ বা মুক্ত ফিলিস্তিনের বার্তা নিয়ে গ্যালারিতে উপস্থিত হয়েছিলেন তাঁরা। ফুটবল মঞ্চে সেল্টিকের এই প্রতিবাদী অবস্থান অবশ্য নতুন নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময় ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়িয়ে আলোচনায় আসে ক্লাবটি। ফুটবল যে শুধু ম্যাচে জয়-পরাজয় নয়, এসব ছাপিয়ে আরও বড় কিছু, সেই বার্তাই মূলত দিচ্ছে এ দুটি ঘটনা।

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর