যেসব অ্যাপস বা সফটওয়্যার তৈরি করতে সর্বোচ্চ ১২ থেকে ২০ লাখ টাকা খরচ হওয়ার কথা, সেগুলোর পেছনে ব্যয় দেখানো হয়েছে সর্বোচ্চ প্রায় ২০ কোটি টাকা। সর্বমোট ১৬টি অ্যাপস তৈরি এবং উন্নয়নে খরচ ধরা হয়েছে ১৫৯ কোটি টাকা।
সেই টাকাও বরাদ্দ করা হয়েছে পুরোপুরি, বেশিরভাগ অর্থ ছাড়ও হয়ে গেছে। অথচ যেসব অ্যাপ বা সফটওয়্যার তৈরি হওয়ার কথা ছিল, তার অর্ধেকেরও বেশি এখনো অসম্পূর্ণ। তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পটি চলছে সাত বছর ধরে। বাড়ানো হয়েছে সময় ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সুবিধা—ফলাফল বলতে আছে খরচের হিসাব আর ফাঁকা প্রতিশ্রুতি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ওপেন সোর্স প্রযুক্তির যুগে OCR, বানান বিশ্লেষণ, স্পিচ টু টেক্সট, এমনকি মেশিন ট্রান্সলেশন পর্যন্ত অনেক ক্ষেত্রে ফ্রিতে পাওয়া যাচ্ছে। বেশিরভাগ অ্যাপস উন্নত প্রযুক্তিতেই বাজারে রয়েছে। সেখানে এত বেশি খরচ করে অ্যাপস তৈরি অস্বাভাবিক বিলাসিতা।
বাংলা ভাষার প্রযুক্তিগত অবস্থান আন্তর্জাতিকভাবে শক্তিশালী করা এবং বিভিন্ন টুলস ও রিসোর্স তৈরি করার উদ্দেশ্যে ২০১৬ সালে ‘গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এবং মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১৫৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। প্রকল্পে লক্ষ্য ছিল—কমপক্ষে ১৬টি সফটওয়্যার, টুলস বা ভাষাভিত্তিক প্রযুক্তি তৈরি করা।
কিন্তু প্রকল্পের সাত বছর পার হলেও আজ পর্যন্ত পুরোপুরি শেষ হয়েছে মাত্র ৭টি কম্পোনেন্ট। আর যে কাজ হয়নি, তা শেষ করার জন্য মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৬ সাল পর্যন্ত। ততদিনে প্রকল্পের আয়ু দাঁড়াবে প্রায় এক দশক। অথচ প্রকল্পের পুরো বরাদ্দকৃত বেশিরভাগ অর্থ এরই মধ্যে ছাড় করা হয়েছে।
গত বছরের আগস্টের গণআন্দোলনের পরে তৎকালীন তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক গ্রেপ্তার হন। কিন্তু পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই সময়েও প্রকল্পের ব্যয় সংক্রান্ত কোনো তদন্ত হয়নি। তদুপরি, কাজ চলছে, মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে এবং অর্থছাড় চলছে।
অ্যাপস ডেভেলপমেন্টের পাশাপাশি এ-সংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের জন্য করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ খরচ। নথি বলছে, কেবল প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সেমিনার/কনফারেন্সেই ধরা হয়েছে ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা। পরামর্শক সেবা বাবদ ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৫৩ লাখ, সম্মানী বাবদ রাখা হয়েছে ৩৫ লাখ ৬৫ হাজার, বৈদেশিক ট্রেনিংয়ে ১ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। তবে এসব খাতের বরাদ্দের অর্থ এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ খরচ করা হয়েছে, তার নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া যানবাহন ভাড়া বাবদ ৯০ লাখ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ কয়েক কোটি, ওভারটাইমেও খরচ ধরা হয়েছে।
দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি আইটি ফার্ম ও সফটওয়্যার বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব কম্পোনেন্টের বেশ কয়েকটির খুব উন্নত ভার্সন অ্যাভেইলেবল আছে। এই প্রকল্পের প্রতিটি সফটওয়্যার বা কম্পোনেন্ট তৈরিতে সর্বোচ্চ ব্যয় হওয়া উচিত ৫ থেকে ১৫ লাখ টাকা। এমনকি যদি সব নতুন করে শুরু থেকে তৈরি করা হয়, তাহলেও প্রকল্পের জন্য সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার বাজেট যথেষ্ট বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সোর্স: কালবেলা
মন্তব্য করুন: