ajbarta24@gmail.com বুধবার, ৮ জানুয়ারি ২০২৫
২৫ পৌষ ১৪৩১

দুয়ার খুললো আয়নাঘরের

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:০১ পিএম

ফাইল ছবি

সাড়ে ৩ ফুট বাই ৪ ফুট আয়তনের আবদ্ধ কক্ষ। একটি মাত্র ছিদ্র, যা দিয়ে বাইরে থেকে বন্দিকে দেখে রাখেন নিরাপত্তারক্ষীরা। এর ভেতরে থাকা অবস্থায় কখন সূর্য ওঠে, কখন অস্ত যায়—তার কিছুই বুঝতে পারেন না বন্দিরা। ওই আবদ্ধ কক্ষেই খাওয়া-দাওয়া সব। সরকারি বাহিনীগুলোর তত্ত্বাবধানে গত ১৫ বছর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এসব গোপন বন্দিশালা তৈরি করা হয়েছিল। যেখানে টার্গেট করা ব্যক্তিকে অপহরণ করে বছরের

সাড়ে ৩ ফুট বাই ৪ ফুট আয়তনের আবদ্ধ কক্ষ। একটি মাত্র ছিদ্র, যা দিয়ে বাইরে থেকে বন্দিকে দেখে রাখেন নিরাপত্তারক্ষীরা। এর ভেতরে থাকা অবস্থায় কখন সূর্য ওঠে, কখন অস্ত যায়—তার কিছুই বুঝতে পারেন না বন্দিরা। ওই আবদ্ধ কক্ষেই খাওয়া-দাওয়া সব। সরকারি বাহিনীগুলোর তত্ত্বাবধানে গত ১৫ বছর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এসব গোপন বন্দিশালা তৈরি করা হয়েছিল। যেখানে টার্গেট করা ব্যক্তিকে অপহরণ করে বছরের পর বছর আটকে রাখা হতো, চালানো হতো নির্মম নির্যাতন। একপর্যায়ে ‘ঊর্ধ্বতনদের ইচ্ছায়’ বন্দিদের কেউ ছাড়া পেতেন, কাউকে গ্রেপ্তার দেখানো হতো, আর কারও ভাগ্যে নেমে আসত নির্মম মৃত্যু।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে চলতি বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর উন্মুক্ত হয়েছে এসব বন্দিশালা। ছাড়া পেয়েছেন বন্দিশালায় দীর্ঘদিন আটকে থাকা অপহৃতরা। এখনো নিখোঁজ আছেন অনেকে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুমের ঘটনা তদন্তে হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলামের নেতৃত্বে গত ২৭ আগস্ট পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিশন গঠন করে সরকার।

সম্প্রতি কমিশন একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, তাদের কাছে ১ হাজার ৬৭৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে। যেখানে গুম অবস্থা থেকে ফিরে আসা ভুক্তভোগী ও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন। এসব অভিযোগের সূত্র ধরে কমিশন ঢাকা ও চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১২টি অফিস পরিদর্শন করেছে। ইন্টারোগেশন রুম পরিদর্শন, ডিটেনশন ফ্যাসিলিটি, নির্যাতনের সরঞ্জাম দেখার পাশাপাশি তথ্য সংগ্রহ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে জবানবন্দি গ্রহণ করেছে। কমিশন জানিয়েছে, র্যাব, ডিজিএফআই, সিটিটিসির মতো বাহিনীগুলো দ্বারা পরিচালিত ৮টি গোপন বন্দিশালার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব বন্দিশালা পরিদর্শনের সময় তদন্ত কমিশন কিছু ঠিক পেয়েছে আর কিছু বন্দিশালার আলামত নষ্ট করা হয়েছে।

কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গত ১৫ বছরে নিখোঁজ ৭৩ শতাংশ ভুক্তভোগীর খোঁজ মিলেছে। এখনো ২৭ শতাংশের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। নিখোঁজদের বিষয়ে গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য নূর খান লিটন কালবেলাকে বলেন, নিখোঁজদের খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে আমাদের তদন্ত চলমান। সুনির্দিষ্টভাবে কোনো নিখোঁজ ব্যক্তির বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী, আলামত বা তার সর্বশেষ অবস্থা পর্যন্ত আমরা যেতে চাই। তারপর সেই ব্যক্তি সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাবে। তার আগ পর্যন্ত আমরা অনুসন্ধান করে যাব।

সরকারের কাছে দেওয়া আংশিক প্রতিবেদনে কমিশন বলেছে, গুমের ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে কমিশন। এ ছাড়া হাসিনা প্রশাসনের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার গুমের ঘটনায় সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান এবং পুলিশ কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

গুম হওয়া ব্যক্তি ছাড়া পেয়ে ফিরে এসেছেন—এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে কমিশন। এমনকি কারাবন্দি আছেন, এমন ব্যক্তিদেরও সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

কমিশন বলছে, গুম হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অনেককে সন্ত্রাসবিরোধী আইন, বিস্ফোরক আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গত ১৫ বছরে ঘটে যাওয়া এমন শত শত উদাহরণ নথিভুক্ত করেছে কমিশন।

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর