ajbarta24@gmail.com বুধবার, ২ এপ্রিল ২০২৫
১৮ চৈত্র ১৪৩১

যেসব ইবাদতের জন্য অজু বাধ্যতামূলক

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:০২ পিএম

সংগৃহীত

ইসলামে পবিত্রতা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম অজু। আরবি এই শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো পরিচ্ছন্ন, স্বচ্ছ ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় বিশেষ নিয়মে বিশেষ কিছু অঙ্গ ধৌত করার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করাকে অজু বলে।

কিছু ইবাদত এমন আছে, যেগুলোর জন্য অজু করা বাধ্যতামূলক।

আবার কিছু ইবাদত বা কাজ এমন আছে, যেগুলোর জন্য অজু করা ফরজ না হলেও মুস্তাহাব। নিম্নে সেই ইবাদতগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো—

যেসব ইবাদতের জন্য অজু বাধ্যতামূলক

নামাজ : নামাজ বেহেশতের চাবি আর অজু নামাজের চাবি। অজু ছাড়া নামাজ আদায়ের সুযোগ নেই। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতে দণ্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত করো, মাথা মাসেহ করো এবং টাখনু পর্যন্ত পা ধৌত করো।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৬)
অর্থাৎ নামাজের জন্য অজু করা বাধ্যতামূলক।

পবিত্র কাবাঘরের তাওয়াফ : আয়েশা (রা.) আমাকে অবহিত করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) মাক্কায় পৌঁছে সর্বপ্রথম যে কাজ করেছেন তা ছিল এই যে তিনি অজু করেন, এরপর বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করেছেন। (মুসলিম, হাদিস : ২৮৯১)

আর নবীজি (সা.) হজের কার্যক্রমের মধ্যে তাঁর অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৯৭০)

তা ছাড়া নবীজি (সা.) বাইতুল্লাহর তাওয়াফকে নামাজের সঙ্গে তুলনা করেছেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৬০)

পবিত্র কোরআন স্পর্শ করা : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ তা স্পর্শ করবে না পবিত্রগণ ছাড়া।’ (সুরা : ওয়াকিয়া, আয়াত : ৭৯)

তাফসিরবিদদের মতে, আয়াতের উদ্দেশ্য এই যে এটাকে এমন লোক, যারা ‘হাদসে-আসগর’ ও ‘হাদসে আকবর’ থেকে পবিত্র, তারা ব্যতীত কেউ যেন স্পর্শ না করে। বে-অজু অবস্থাকে হাদসে-আসগর বলা হয়। অজু করলে এই অবস্থা দূর হয়ে যায়।

যেসব কাজের জন্য অজু মুস্তাহাব

মুখস্থ কোরআন তিলাওয়াত ও জিকিরের সময় : মুখস্থ কোরআন তিলাওয়াত ও জিকিরের জন্য অজু বাধ্যতামূলক নয়।

তবে গোসল ফরজ অবস্থায় মুখস্থ কোরআন তিলাওয়াত করাও নিষেধ। স্বাভাবিক অবস্থায় মুখস্থ কোরআন তিলাওয়াত এবং জিকিরের সময়ও অজু অবস্থায় থাকা মুস্তাহাব। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আল-মুহাজির ইবনু কুনফু (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা তিনি নবী (সা.)-এর নিকট গিয়ে তাঁকে সালাম দিলেন। তখন নবী (সা.) পেশাব করছিলেন। সে জন্য অজু না করা পর্যন্ত তিনি তার জবাব দিলেন না। অতঃপর (পেশাব শেষে অজু করে) তিনি তার নিকট ওজর পেশ করে বললেন, পবিত্রতা ছাড়া আল্লাহর নাম স্মরণ করা আমি অপছন্দ করি।
(আবু দাউদ, হাদিস : ১৭)

এ হাদিসের আলোকে হাদিস অধ্যয়ন, দ্বিনি আলোচনা, ইসলামী জ্ঞান অর্জন, আজান দেওয়া ইত্যাদি সময়ও অজু করা মুস্তাহাব বলা যেতে পারে।

প্রতি নামাজের জন্য নতুন অজু করা

এক অজুতে একাধিক নামাজ পড়া নিষেধ নয়। তবে প্রতি নামাজের জন্য অজু থাকা সত্ত্বেও নতুন করে অজু করে নেওয়া মুস্তাহাব।

মহানবী (সা.) প্রত্যেক নামাজের ওয়াক্তে নতুন করে অজু করতেন।... (তিরমিজি, হাদিস : ৬০)

কোনো কারণে ফরজ গোসল বিলম্ব করলে

এটি দুটি কারণে হতে পারে, ১. ফরজ গোসলের আগে একাধিকবার স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য। আর হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে,

নবী (সা.) বলেন, যখন তোমাদের কেউ নিজ স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করার পর যদি আবার সহবাস করতে চায়, তখন সে যেন এর মাঝখানে অজু করে নেয়। (তিরমিজি, হাদিস : ১৪১)

২. গোসল ফরজ হওয়া ব্যক্তি যদি গোসল বিলম্ব করে পানাহার কিংবা ঘুমানোর প্রয়োজন পড়ে। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন গোসল ফরজ অবস্থায় থাকতেন তখন কিছু খেতে অথবা ঘুমানো ইচ্ছা করলে অজু করে নিতেন; যেমন—নামাজের অজু করতেন। (মুসলিম, হাদিস : ৫৮৭)

ফরজ গোসলের আগে : আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন অপবিত্রতা থেকে গোসল করতেন তখন প্রথমে দুই হাত ধুতেন। তারপর ডান হাত দিয়ে বাঁ হাতে পানি ঢেলে লজ্জাস্থান ধুতেন। তাঁরা নামাজের অজুর মতো অজু করতেন। ...(মুসলিম, হাদিস : ৬০৫)

ঘুমানোর আগে : বারাআ ইবনে আযেব (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন সালাতের অজুর মতো অজু করে নেবে...। (বুখারি, হাদিস : ২৪৭)

একটি হাদিসে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর অজু করলে শয়তানের গিঁট খুলে যায় বলেও উল্লেখ আছে।

অজু ভেঙে গেলে অজু : সার্বক্ষণিক অজু অবস্থায় থাকাও ফজিলতপূর্ণ কাজ। এই কাজের কারণে মহান আল্লাহ বিলাল (রা.)-কে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিলেন। নবীজি (সা.) মিরাজের সফরে জান্নাত থেকে বেলাল (রা.)-এর জুতার শব্দ পেয়েছিলেন। ফিরে এসে তিনি বিলাল (রা.)-কে তার বিশেষ আমল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি আজান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুই রাকাত নামাজ আদায় করি। আর আমার অজু নষ্ট হয়ে গেলে তখনই অজু করে আল্লাহর জন্য দুই রাকাত নামাজ আদায় করাকে জরুরি মনে করি। তখন নবীজি বলেন, এ কারণেই তুমি এত বিশাল মর্যাদায় পৌঁছে গেছ। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৬৮৯)

আরো অনেক নেক আমল এমন আছে, যেগুলোর সময় অজু করা মুস্তাহাব, যেমন—সাঈ করার সময়, লাশ গোসল দেওয়ার পর, রাগের সময় ইত্যাদি।

সোর্স: বাংলাদেশ প্রতিদিন

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর