ক্ষমতা চূড়ান্ত হলেও তা চিরস্থায়ী নয়, বিশেষ করে রাজনীতি ও জনরোষের জটিল জগতে। ইতিহাসের পাতায় এমন বহু নাম রয়েছে যারা একদিন ছিলেন দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতায়, আর একদিন পালিয়ে বেড়িয়েছেন জীবন বাঁচাতে।
কখনো গণআন্দোলন, কখনো অভ্যুত্থান বা কখনো আন্তর্জাতিক চাপে। অনেক রাষ্ট্রপ্রধানই একসময় দেশ ছেড়ে নির্বাসনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। কেউ আর ফিরে আসেননি, কেউ ফিরেছেন অনেক বছর পর।
ক্ষমতা যত বড়ই হোক, জনরোষের কাছে তা অস্থায়ী হয়ে পড়ে মুহূর্তেই। কোনো এককালের ক্ষমতাবান রাষ্ট্রপ্রধান যখন দেশ ছাড়তে বাধ্য হন, তখন তা ইতিহাসে দাগ কেটে যায়। আসুন তেমন কিছু রাষ্ট্রপ্রধানের সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক যাদের ক্ষমতা ছেড়ে জীবন নিয়ে পালাতে হয়েছিল-
ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ (ইউক্রেন)
গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হলেও ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ পরিচিত ছিলেন রাশিয়াপন্থি হিসেবে। ২০১৪ সালে তার নীতির বিরোধিতায় ইউক্রেনে শুরু হয় তীব্র আন্দোলন। বিক্ষোভকারীরা রাজধানী কিয়েভ দখল করে নিলে পার্লামেন্ট তাকে বরখাস্ত করে। এরপর তিনি পালিয়ে রাশিয়ায় আশ্রয় নেন এবং এখনো সেখানেই অবস্থান করছেন।
ইদি আমিন (উগান্ডা)
উগান্ডার স্বৈরশাসক ইদি আমিন ১৯৭০-এর দশকে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য কুখ্যাত ছিলেন। ১৯৭৯ সালে জনরোষে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যান। এর আগে তিনি লিবিয়া ও ইরাকেও অবস্থান করেছিলেন। সৌদিতে লোহিত সাগরের পাশে বিলাসবহুল জীবন কাটান প্রায় দুই দশক। ২০০৩ সালে রিয়াদের এক হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
বেন আলী (তিউনিসিয়া)
আরব বসন্তের উত্তাপে ২০১১ সালে ২৩ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা বেন আলীকে তিউনিসিয়া ছাড়তে হয়। তিনি সৌদি আরবে পালিয়ে যান। সেখানে তার সম্পর্কে খুব কম তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১৯ সালে জেদ্দার এক হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
আশরাফ ঘানি (আফগানিস্তান)
২০২১ সালে তালেবানরা রাজধানী কাবুলের দিকে এগিয়ে আসার সময় আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি পালিয়ে যান। পরে জানা যায় তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থান নিয়েছেন। নিজ দেশের রক্তপাত এড়াতে তিনি দেশ ছেড়েছেন বলে দাবি করেন।
ফার্দিনান্ড মার্কোস (ফিলিপিন্স)
১৯৮৬ সালে জনবিক্ষোভ ও বিরোধীদের চাপে মার্কোসকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় তিনি গুয়াম দ্বীপে যান এবং পরে হাওয়াইয়ে আশ্রয় নেন। ১৯৮৯ সালে সেখানেই মারা যান।
মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভি (ইরান)
ইরানে ইসলামী বিপ্লবের মুখে ১৯৭৯ সালে শাহ পাহলভিকে দেশ ছাড়তে হয়। মিশর, মরক্কো, বাহামা, মেক্সিকো, আমেরিকা হয়ে আবার মিশরে ফিরে যান। ১৯৮০ সালে কায়রোতে তার মৃত্যু হয়।
নওয়াজ শরিফ (পাকিস্তান)
তিনবারের প্রধানমন্ত্রী থাকা নওয়াজ শরীফ ১৯৯৯ সালে সেনা প্রধান মুশাররফের সঙ্গে দ্বন্দ্বে ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর সৌদি আরবে নির্বাসনে যান। পরে দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৯ সালে লন্ডনে যান এবং ২০২৩ সালে দেশে ফিরে আসেন।
পারভেজ মোশাররফ (পাকিস্তান)
নওয়াজ শরিফকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলকারী মোশাররফ ২০০৮ সালে নির্বাচন হেরে দেশ ছাড়েন। ২০১৩ সালে ফিরে গ্রেফতার হন। পরে ২০১৬ সালে চিকিৎসার অজুহাতে দুবাই যান এবং ২০২৩ সালে সেখানেই মৃত্যু হয়।
থাকসিন শিনাওয়াত (থাইল্যান্ড)
২০০৬ সালে সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন থাকসিন। বিদেশে থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। পরে লন্ডনে চলে যান এবং সেখানে ১৫ বছর নির্বাসনে ছিলেন। ২০২৩ সালে তিনি দেশে ফেরেন।
চার্লস টেলর (লাইবেরিয়া)
২০০৩ সালে গৃহযুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে চার্লস টেলর দেশ ছাড়েন। পরে যুদ্ধাপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ৫০ বছরের সাজা পান। দ্য হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে তার বিচার হয়।
গোটাবায়া রাজাপাকশা (শ্রীলঙ্কা)
২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সংকটে সৃষ্ট গণআন্দোলনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান রাজাপাকশা। তিনি প্রথমে সিঙ্গাপুর, পরে থাইল্যান্ডে আশ্রয় নেন। দুই মাস পর তিনি দেশে ফিরে আসেন।
শেখ হাসিনা (বাংলাদেশ)
২০২৪ সালে কোটা আন্দোলন ঘিরে সারাদেশে তীব্র গণবিক্ষোভ শুরু হয়। ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণহত্যা’র রেশ কাটতে না কাটতেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপনে দেশত্যাগ করে ভারত পালিয়ে যান। সেনাবাহিনী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে। আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘদিনের শাসনের অবসান ঘটে।
সোর্স: জাগোনিউজ২৪.কম
মন্তব্য করুন: