হাবিলদার মোঃ গোলাম মোস্তফা, বীর প্রতীক, ই বেংগল পার্বত্য চট্টগ্রামের মানিকছড়িতে ১৬ ই বেংগল ব্যাটালিয়নের বি কোম্পানীতে কর্মরত ছিলেন। ৩১ ডিসেম্বর ১৯৭৮ তারিখ বিকালে একজন ইনফর্মার কোম্পানী কমান্ডার ক্যাপ্টেন মনোয়ারকে সংবাদ দেয় যে, মোরা কোলা নামক স্থানের কোন একটি বাড়ীতে শান্তি বাহিনীর ৫/৭ জনের একটি দল প্রতি রাতে অবস্থান
হাবিলদার মোঃ গোলাম মোস্তফা, বীর প্রতীক, ই বেংগল পার্বত্য চট্টগ্রামের মানিকছড়িতে ১৬ ই বেংগল ব্যাটালিয়নের বি কোম্পানীতে কর্মরত ছিলেন। ৩১ ডিসেম্বর ১৯৭৮ তারিখ বিকালে একজন ইনফর্মার কোম্পানী কমান্ডার ক্যাপ্টেন মনোয়ারকে সংবাদ দেয় যে, মোরা কোলা নামক স্থানের কোন একটি বাড়ীতে শান্তি বাহিনীর ৫/৭ জনের একটি দল প্রতি রাতে অবস্থান করে। ইনফর্মার এর এই সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মনোয়ার বি কোম্পানির একটি প্লাটুন হতে ২০ জনের একটি অপারেশনাল দল রেডি করার নির্দেশ দেন এবং বলেন যে, সন্ধ্যার সাথে সাথে অপারেশনে যেতে হবে।
দলটি সূর্য ডোবার পরপর রাতের আঁধারে হাঁটতে শুরু করে। আনুমানিক ১০/১২ মাইল হাঁটার পর দলটি দুইটি বাড়ী দেখতে পায়। একটি বাড়ীর বারান্দায় হারিকেন জ্বলছিল, কিন্তু কোন লোকজনের আওয়াজ ছিল না। ক্যাপ্টেন মনোয়ার হাবিলদার মোস্তফাকে বলেন "হাবিলদার মোস্তফা, তুমি আমার পিছনে থাকবে, আমরা দুজন প্রথমে বাড়ীর কাছাকাছি যাবো, আর বাকি সকলে বাড়ীর চারপাশে পজিশনে থাকবে।" অপারেশন দলের সবাই ক্যাপ্টেন মনোয়ারের নির্দেশ মেনে অবস্থান নেয়। এ সময় শান্তিবাহিনীর সন্ত্রাসীদের মধ্য থেকে একজন সেনাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে অপারেশন দলের উপর ফায়ার করতে শুরু করে। ক্যাপ্টেন মনোয়ার, হাবিলদার মোস্তফা এবং অপারেশন দলের অন্যান্য সদস্যরা তৎক্ষণাৎ শাস্তিবাহিনীর সন্ত্রাসীদের উপর কার্যকরীভাবে ফায়ার করতে থাকে। দুই পক্ষের ফায়ার এক্সচেঞ্জের একপর্যায়ে অপারেশন দলের কমান্ডার ক্যাপ্টেন মনোয়ার শত্রুর বুলেটে আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে হাবিলদার মোস্তফা অপারেশনটি সম্পন্ন করার জন্য এবং অন্যান্যদেরকে পিছিয়ে না যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে থাকেন। একই সাথে হাবিলদার মোস্তফা শান্তিবাহিনীর গুলিকে উপেক্ষা করে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে প্রতিরোধ করতে থাকেন।
তিনি একাই শান্তিবাহিনীর তিনজন সন্ত্রাসীকে ঘায়েল করতে সক্ষম হন। শান্তি বাহিনীর সন্ত্রাসীদের সম্পূর্ণরূপে পরাস্ত করার পর হাবিলদার মোস্তফা ওয়াকিটকি সেটে ব্যাটালিয়ন সদরে যোগাযোগ করে অপারেশনের বিস্তারিত তথ্য জানান। অতঃপর হেলিকপ্টার এর মাধ্যমে সকলকে ব্যাটালিয়ান সদরে নিয়ে আসা হয়। এই অপারেশনে শান্তিবাহিনীর ০৫ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়। এছাড়া শান্তিবাহিনীর ০৪টি .৩০৩ রাইফেল, ০১টি এসএমজি, ৫৮ রাউন্ড গুলি ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল দস্তাবেজ এবং শান্তিবাহিনীর পোষাক উদ্ধার হয়।
এই অপারেশনে হাবিলদার মোঃ গোলাম মোস্তফা কর্তৃক অসীম সাহসিকতা প্রদর্শন এবং অপারেশন পরবর্তী কার্যক্রম সফলভাবে সম্পাদনের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করে।
(চলবে)
মন্তব্য করুন: