কুষ্টিয়ায় বিএনপির কর্মী সুজন মালিথা হত্যা মামলার প্রধান আসামি ‘তিন অপশন’ খ্যাত জেলার সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম তানভীর আরাফাতকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে তাকে কুষ্টিয়া সদর আমলি আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিহাবুর রহমান শিহাব বিষয়টি জানি
কুষ্টিয়ায় বিএনপির কর্মী সুজন মালিথা হত্যা মামলার প্রধান আসামি ‘তিন অপশন’ খ্যাত জেলার সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম তানভীর আরাফাতকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে তাকে কুষ্টিয়া সদর আমলি আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিহাবুর রহমান শিহাব বিষয়টি জানিয়েছেন। খুলনার খালিশপুরের বাসিন্দা তানভীর আরাফাত সিলেট রেঞ্জ ডিইউজি অফিসে উপ-পুলিশ কমিশনার (সংযুক্ত) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় তিনি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার ছিলেন। আন্দোলনে সাংবাদিকদের ওপর হামলার অভিযোগও ছিল তার বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সুজন মালিথা নিহত হন। এর আগে সুজনকে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ এনে ওই ঘটনায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা হয়। এতে আসামি হিসেবে মোট ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ১০-১২ জনকে।
তানভীর আরাফাত ছাড়া মামলার এজাহারনামীয়রা হলেন- কুষ্টিয়া মডেল থানার সাবেক ওসি নাসির উদ্দিন, একই থানার সাবেক ওসি এ কে এম মিজানুর রহমান, সাবেক এসআই সাহেব আলী, এসআই মোস্তাফিজুর রহমান, কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ (কারাগারে), সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা, দৌলতপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান টোকন চৌধুরী, কুষ্টিয়া নাগরিক পরিষদের সভাপতি এবং কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) চেয়ারম্যান সাইফুদ্দৌলা তরুন (৪৮), কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব (৪৫), কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মহিদুল ইসলাম, ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ আরিফুর হোসেন সজীব, কুষ্টিয়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কৌশিক আহমেদ ওরফে বিচ্ছু, জেলা শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি সোহাগ আলী।
সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আব্দুর রউফ গত অক্টোবরে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। হানিফসহ অনেকে পলাতক। কুষ্টিয়ার আদালত পুলিশের পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম জানান, বিচারবহির্ভূত হত্যার মামলার নির্ধারিত দিন থাকায় সাবেক এসপি তানভীর আরাফাত বৃহস্পতিবার দুপুরে অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা সুলতানার আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার টাকিমারা গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল মালিথার ছেলে সুজন মালিথা (৩২) ছিলেন বিএনপির কর্মী। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনকে চ্যালেঞ্জ করে নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে দলের কাজ করতেন। এতে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাদের যোগসাজশ এবং উস্কানিতে সুজন মালিথাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়।
তারই জের ধরে ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে দলীয় কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে আসামিরা সবাই মিলে সুজন মালিথার বাসায় ঢোকে এবং তাকে জোরপূর্বক তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে অজ্ঞাতস্থানে চলে যায়। পরদিন সকালে সুজনের পরিবার জানতে পারে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে উল্লিখিত আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে সুজন মালিথাকে বাসা থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর রাত ১টা ৩০ মিনিটে কুষ্টিয়া মডেল থানাধীন মোল্লাতেঘরিয়া পূর্ব ক্যানালের পাড়ে গুলি করে হত্যা করেছে। পরে বাদীসহ সুজন মালিথার পরিবারের লোকজন আসামিদের কাছে উপস্থিত হয়ে সুজন মালিথাকে হত্যার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা কোনো সদুত্তর না দিয়ে স্বজনদেরই তাড়িয়ে দেয়।
নানা কাণ্ডে সমালোচিত ছিলেন তানভীর
কুষ্টিয়া জেলায় এসপি হয়ে আসার পর থেকেই নানা কর্মকাণ্ডে সমালোচনার মুখে পড়েন তানভীর আরাফাত। এমনকি এসব কাণ্ডে তাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়, ভুগতে হয় বিভাগীয় শাস্তিও। ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ায় ‘কুমারখালী নাগরিক পরিষদ’র ব্যানারে আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য সেলিম আলতাফ। সেখানে অতিথি ছিলেন কুষ্টিয়ার তৎকালীন এসপি এস এম তানভীর আরাফাত। তিনি তার বক্তব্যে বিরোধী পক্ষগুলোকে ‘তিনটি অপশন’ দেন । তানভীর আরাফাত বলেন, ‘এক. উল্টাপাল্টা করবা হাত ভেঙে দেব, জেল খাটতে হবে। দুই. একেবারে চুপ করে থাকবেন, দেশের স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস নিয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারবেন না। তিন. আপনার যদি বাংলাদেশ পছন্দ না হয়, তাহলে ইউ আর ওয়েলকাম টু গো ইউর পেয়ারা পাকিস্তান। ’ তার এ বক্তব্য তখন তুমুল আলোচনায় আসে। এসপি তানভীর এক সমাবেশে ‘বালিশ ছাড়া শোওয়াইয়া দেব’ বলেও ঘোষণা দেন, যেটাকে বিচারবহির্ভূত হত্যার হুমকি বলে সেসময় ব্যাপক সমালোচনা হয়।
এমনকি ভেড়ামারায় পৌর নির্বাচনে ভোট কারচুপিতে বাধা দেওয়ায় কর্তব্য পালনরত একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে লাঞ্চিত করার অপরাধে উচ্চ আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছিল তানভীর আরাফাতকে। ওই ঘটনায় আগে থেকেই তিনি বিভাগীয় শাস্তি (পদায়ন বঞ্চিত) ভোগ করছিলেন। পাঁচ বছর আগে কুষ্টিয়ায় চাকরিকালে বহুল আলোচিত-সমালোচিত ও বিতর্কিত এসপি তানভীর আরাফাতের কারাগারে যাওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে স্বয়ং আদালত পাড়াতেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন অনেকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বেঞ্চ সহকারী জানান, একেই বলে ‘ধর্মের কল বাতাসে নড়ে’।
মন্তব্য করুন: