অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, আরাফাতের বাবা শহীদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলমসহ অনেকে আরাফাতের জানাজায় শরিক হন বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া ১২ বছর বয়সী মাদ্রাসা ছাত্র কিশোর আরাফাতের (১১) জানাজা সম্পন্ন হয়েছে।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন তার বড় ভাই হাসান আলী। পরে উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
এর আগে রোববার দিনগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) আরাফাতের মৃত্যু হয়। সে মাদরাসার শিক্ষার্থী ছিল। আরাফাত জুলাই বিপ্লবে শহীদের তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন ।
জানাজা শেষে নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গণহত্যাকারীদের আমরা বাংলার মাটিতে বিচার নিশ্চিত করবো এ ঘোষণা দিয়েই আমরা একদফা ঘোষণা করেছিলাম। এক বিন্দু পরিমাণও আমরা পিছপা হইনি। আমরা বিচার নিশ্চিত করবোই।
তিনি বলেন, যারা ভারতে আশ্রয় নিয়েছে এবং ভাবছে বাইরে থেকে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করবে, তাদেরকে বলবো বিচারের সম্মুখীন হওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আসবে কেবল বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য, ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলার জন্য।
উপদেষ্টা বলেন, অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সমাজের বিভাজন দূর হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার সমাজের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে রেখেছিল। ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা তা দূর করেছি। আমরা সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধ আছি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, এই শহীদ বাবা-মায়ের সামনে দাঁড়ানোর সাহস আমাদের আর নেই। শহীদ আরাফাত একজন শিশু। দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করতে সে রাস্তায় নেমেছিল। আমাদের শহীদ হওয়ার সৌভাগ্য হয়নি, কিন্তু শহীদ ও আহত পরিবারের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশকে বিনির্মাণ করার দায়িত্ব রয়েছে।
তিনি বলেন, এই আন্দোলনে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল। বিগত সরকারের মাদ্রাসার ছাত্রদের ওপর ক্ষোভ ছিল। সেসময় তারা বঞ্চনা ও অবহেলার শিকার হয়েছে। আমরা দেখেছি, কীভাবে ২০১৩ সালে তাদের ওপর পুলিশি নিপীড়ন হয়েছে। তবুও তারা রাস্তায় নেমে লড়াই করেছে, আমরা তাদের স্যালুট জানাই। শহীদ ও আহত পরিবারকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ভূষিত করে পুনর্বাসন করা হবে বলেও জানিয়েছেন এই উপদেষ্টা।
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব সারজিস আলম বলেন, আমাদের শহীদের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। আমরা যেন আমাদের ভাইদের স্বপ্নকে কোনোভাবেই ভুলে না যাই। আমরা কোনো শহীদের পরিবারের বাবা-মাকে তাদের সন্তানকে ফিরিয়ে দিতে পারবো না, তবে এতটুকু বলতে পারি খুনিদের বিচার নিশ্চিত করা হবে।
রোববার রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসারত অবস্থায় কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আরাফাত। তার মৃত্যুর ব্যাপারে আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় গঠিত টিমের সদস্য ডা. হুমায়ুন কবির হিমু গণমাধ্যমকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়ে গত ৫ই আগস্ট পুলিশের গুলিতে আহত হয় আরাফাত। পরদিন তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার পাঁজরে গুলি লাগে। এতে তার ফুসফুস, মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আরাফাতকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। আরাফাতের বাড়ি ঢাকার আজমপুরের পাকুরিয়া এলাকায়। উত্তরা জামিয়া রওজাতুল উলুম মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল সে।
মন্তব্য করুন: