[email protected] বৃহঃস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
১২ আষাঢ় ১৪৩২

আমেরিকা-ইসরাইল-ইরান যুদ্ধে কার কত ক্ষতি?

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৬ জুন ২০২৫ ১৬:০৬ পিএম

ফাইল ছবি

মাত্র ১২ দিনের যুদ্ধ। কিন্তু স্বল্প সময়ের তীব্র সংঘাত ইরান-ইসরাইল উভয়ের জন্যই ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য ব্যাহত হয়েছে এবং বিমান চলাচলের পথ বদলানো হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পরিণতি আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

যুদ্ধবিরতি বহাল রয়েছে। তবুও এই যুদ্ধের পুরো খরচ এখনও অনুদ্ঘাটিত রয়েছে।

ইরানের ক্ষতিঃ

কিংস কলেজ লন্ডনের সহযোগী অধ্যাপক এবং মেনা অ্যানালিটিকার পরিচালক আন্দ্রেয়াস ক্রিগ বলেছেন, এই জুনে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিনের যুদ্ধে অঞ্চলজুড়ে যথেষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে, যদিও তা নির্ণয় করা মসৃণ ছিল না।

ইতোমধ্যে কয়েক দশক ধরে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ইরানকে আরও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।

তুর্কি গণমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ক্রিগ অনুমান করেছেন, মোট প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ক্ষতি হয়েছে ২৪ থেকে ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে, যা ইরানের আনুমানিক ৩৮০ বিলিয়ন ডলার জিডিপির প্রায় ৬.৩ থেকে ৯.২ শতাংশের সমান।

মার্কিন ও ইসরায়েলি হামলা ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোকে দুর্বল করে তুলেছে। তেহরানের তেল রপ্তানিতেও ব্যাপক ধ্বস নামিয়েছে। জ্বালানি স্থাপনা এবং সামরিক অবকাঠামোর ক্ষতি ইরানের কাঠামোগত দুর্বলতাগুলিকে আরও গভীর করে তুলবে।যুদ্ধোত্তর পুনরুদ্ধার কার্যক্রমকেও বিলম্বিত করার শঙ্কা রয়েছে।

‘‘যুদ্ধ ইরানের আর্থিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলিকে আরও গভীর করেছে, যার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব দেশটির অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার উপর পড়বে,’’ বলেছেন ইসলামাবাদ-ভিত্তিক ইরান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আইমেন জামিল।

মার্কিন ও ইসরায়েলের ক্ষতি

ইরানের উপর হামলার প্রথম সপ্তাহে ইসরায়েল প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে। অর্থাৎ দৈনিক যুদ্ধ ব্যয় ৭২৫ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। এর মধ্যে আক্রমণাত্মক অভিযানের জন্য ৫৯৩ মিলিয়ন ডলার এবং প্রতিরক্ষা ও সংহতিকরণের জন্য ১৩২ মিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয়েছে এই দুই মিত্রকে।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতে, কেবল ক্ষেপণাস্ত্র-বিরোধী ব্যবস্থার জন্য ইসরায়েলের প্রতিদিন ১০ মিলিয়ন থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে।

ক্রিগের মতে, অর্থনৈতিকভাবে আরও স্থিতিশীল হলেও ইসরায়েল অক্ষত ছিল না।তিনি অনুমান করেন, ১১.৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৭.৮ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে, যা দেশটির ৫৪০ বিলিয়ন ডলারের জিডিপির ২.১ থেকে ৩.৩ শতাংশের সমান।

ক্রিগ আরও বলেন, “ক্ষয়ক্ষতির এই পরিসংখ্যানে সামরিক ব্যয়, অবকাঠামোগত ক্ষতি এবং ইরানের ছোড়া চার শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্রকে প্রতিহত করার ব্যয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কিন্তু সরাসরি খরচের বাইরেও বহু ক্ষয়ক্ষতির হিসাব রয়েছে।

ব্যবসা বন্ধ, বাণিজ্যিক বিমান চলাচলে স্থগিতাদেশ এবং কৃষি ও নির্মাণে শ্রম ঘাটতি ইসরাইলের অর্থনৈতিক চাপকে আরও খারাপ করেছে। ‘‘বিনিয়োগ স্থগিত এবং মেগা-প্রকল্পগুলি বিলম্বিত হওয়াসহ এসব ক্ষতির দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়তে পারে,’’ বলেন ক্রিগ।

জামিল টিআরটি ওয়ার্ল্ডকে বলেন, ইরানের হামলার ফলে বহুমুখী সামরিক অভিযান এবং অবকাঠামোগত ক্ষতির কারণে ইসরায়েল ‘উল্লেখযোগ্য খরচ বহন করেছে’। যা গাজায় তাদের চলমান অভিযানের আর্থিক চাপকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে, দেশটির ‘স্থিতিস্থাপক অর্থনীতি এবং উল্লেখযোগ্য রিজার্ভ তাৎক্ষণিক অস্থিরতার মধ্যে পড়ে।

ক্রিগের মতে, ইরান এবং ইসরায়েল উভয়ের তুলনায় ট্রাম্পের অপারেশন মিডনাইট হ্যামারের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘একটি ছোটখাটো আর্থিক ক্ষতি’ ভোগ করতে হয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ১ থেকে ২ বিলিয়ন ডলার। আমেরিকার ২৮ ট্রিলিয়ন অর্থনীতির যা একটি নগণ্য শতাংশের সমান।

‘‘তবুও ন্যূনতম সরাসরি দৃশ্যমান আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি থাকা সত্ত্বেও, গভীর সম্পৃক্ততা ঘেটে দেখলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত খরচ বাড়তে পারে। আঞ্চলিক অস্থিরতা, বিশ্বব্যাপী তেল বাজারের অস্থিরতা এবং মার্কিন কূটনীতিতে অসঙ্গতির ধারণা মধ্যপ্রাচ্যে ওয়াশিংটনের দীর্ঘমেয়াদী অবস্থানকে জটিল করে তোলার ঝুঁকিতে ফেলেছে,’’ বলেন ক্রিগ।

সোর্স: ইনকিলাব

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর