যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সম্পর্ক নতুন করে সংঘাতের পথে হাঁটছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এখন রাশিয়ার দিকে—বিশেষ করে দেশটি কিভাবে এই উত্তপ্ত ইস্যুতে নিজের অবস্থান গ্রহণ করছে, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
শনিবার (২১ জুন) গভীর রাতে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ফোর্দো, নাতাঞ্জ এবং ইসফাহান—এই তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। হামলার পর ইরান পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে জানায়, তারা এই আগ্রাসনের জবাব দেবে। এমন উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে সোমবার (২৩ জুন) রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ক্রেমলিন সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই বৈঠকে রাশিয়াকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যুক্ত করার চেষ্টা চালাতে পারে ইরান, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা কমানোর পথ খুঁজতে।
রাশিয়া এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের হামলা নিয়ে প্রেসিডেন্ট স্তরে কোনো সরাসরি মন্তব্য না করলেও, রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়েছে। তারা এটিকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে। তবে ভ্লাদিমির পুতিন নিজেই কিছুদিন আগে বলেছেন, রাশিয়া এই সংঘাতে সামরিকভাবে জড়াবে না, কারণ তারা আগে থেকেই ইউক্রেনে সামরিকভাবে ব্যস্ত। পুতিন মনে করেন, ইরান-ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার এই সংঘাতের কোনো সামরিক সমাধান নেই, এবং এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমঝোতাই একমাত্র পথ।
রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। একদিকে তারা ইরানের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েলের বিষয়ে অনেক বেশি সতর্ক ও সংযত ভাষা ব্যবহার করছে। এর পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বাস্তবতা রয়েছে—ইসরাইলে প্রায় ১৫ লাখ রুশভাষী নাগরিক বাস করেন, যাঁদের অনেকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন বা সরাসরি রাশিয়া থেকে গিয়েছেন। পুতিন একবার বলেছিলেন, "ইসরায়েল প্রায় রুশভাষী একটি দেশ।" তাই রাশিয়া এই দুই অঞ্চলের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে চলার চেষ্টা করছে।
এদিকে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমানে নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা চালিয়ে তেমন কিছু অর্জন করতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি একসময় "শান্তির দূত" হিসেবে পরিচিত ছিলেন, এখন নিজ দেশকে নতুন এক যুদ্ধের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছেন।
সোর্স: ইনকিলাব
মন্তব্য করুন: