[email protected] বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
১১ আষাঢ় ১৪৩২

দেশ জুড়ে ৩ রোগের প্রকোপ!

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০২৫ ১৭:০৬ পিএম

ফাইল ছবি

দেশে ডেঙ্গু, করোনা এবং চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ায় জনসাধারণের মধ্যে চরম উদ্বেগ বিরাজ করছে। জ্বর এলেই মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন—তা কি ডেঙ্গু, করোনা নাকি চিকুনগুনিয়া?

সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন শিশুদের অভিভাবকরা। কেউ মশারি ব্যবহার করছেন, কেউ মশানিধন কার্যক্রমে মনোযোগী, আবার কেউ মাস্ক পরিধানে সতর্ক হয়েছেন।

চিকিৎসকরা বলছেন, বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী নারী, দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় ভোগা ব্যক্তি এবং যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তারাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন। তাই জ্বর হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৮,৫৪৪ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৪ জন। বরগুনা বর্তমানে ডেঙ্গুর রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত।

অন্যদিকে, করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টও দেশে সংক্রমণ বাড়াচ্ছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৭৩ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। চিকুনগুনিয়াও অনেক এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুর প্রাক-বর্ষা জরিপে দেখা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অন্তত ১৩টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব সীমা ছাড়িয়ে গেছে।চিকিৎসকরা বলছেন, এই তিন রোগের ক্ষেত্রে কিছু লক্ষণ একই রকম মনে হলেও ডেঙ্গুর সঙ্গে করোনা ও চিকুনগুনিয়ার লক্ষণের পাঁচটি পার্থক্যের কথা উল্লেখ করেন চিকিৎসকরা।

এগুলো হলো—জ্বর: সাধারণত জ্বরের মধ্য দিয়েই ডেঙ্গু রোগীর প্রথম লক্ষণ প্রকাশ পায়। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে সাধারণত চার থেকে পাঁচ দিন জ্বর থাকে। জ্বরের মাত্রা থাকে ১০২ থেকে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট। আর করোনার ক্ষেত্রে সাধারণত দুই থেকে সাত দিন অল্প মাত্রার (১০০ থেকে ১০১ ডিগ্রি ফা.) জ্বর থাকে। চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে অল্প থেকে বেশি মাত্রার জ্বর থাকতে পারে দুই থেকে চার দিন।

ব্যথা: ডেঙ্গুর আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন স্থানে সাধারণত মাথায়, চোখের পেছনে, মাংশপেশী, শিরদাঁড়ায় তীব্র ব্যথা হয়। করোনার ক্ষেত্রে মাথা ও মাংশপেশীতে অল্প থেকে মাঝারী আর চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে তীব্র ব্যথা হয়।

র‍্যাশ ও রক্তক্ষরণ: ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন স্থানে নানা ধরনের র‍্যাশ উঠতে পারে। পাশাপাশি কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে হতে পারে রক্তক্ষরণ। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলে অসুস্থতার দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে র‍্যাশ উঠতে শুরু হয়। আর সাত দিনের মধ্যে কমে যায়। করোনার ক্ষেত্রে এই লক্ষণ থাকে না।

বমি ও পাতলা পায়খানা: এই লক্ষণ ডেঙ্গু আক্রান্তের ক্ষেত্রে অন্যতম। করোনা আক্রান্ত রোগীরও বমি বা পাতলা পায়খানা হতে পারে। তবে চিকুনগুনিয়ায় সাধারণত এ লক্ষণ দেখা যায় না।

রক্তচাপ কমে যাওয়া: ডেঙ্গুতে আক্রান্ত প্রায় ৫০ ভাগ রোগীর রক্তচাপ কমে যায় এবং অল্পসংখ্যক রোগীর কিডনি, ব্রেইন, হার্ট বিকল হয়ে যেতে পারে। করোনায় আক্রান্ত রোগীর সাধারণত রক্তচাপ কমে না। কিন্তু ফুসফুস বিকল হয়ে যেতে পারে। তবে চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে রক্তচাপ কমে না, অর্গান বিকল হয় না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু ও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ করে করলেও চিকুনগুনিয়া নিয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। ফলে এই রোগে আক্রান্তের সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, এডিস ইজিপ্টি এবং এডিস অ্যালবোপিক্টাস মশা চিকুনগুনিয়া রোগের বাহক। চিকুনগুনিয়া ভাইরাসটি টোগা ভাইরাস গোত্রের। মশাবাহিত হওয়ার কারণে একে আরবো ভাইরাসও বলে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন মনে করেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ডেঙ্গুতে এবার আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে। কারণ থেমে থেমে বৃষ্টি ও ভ্যাপসা গরম ডেঙ্গুর বিস্তারে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করেছে।

সোর্স: গ্রামেরকাগজ.কম 

 

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর