ajbarta24@gmail.com শনিবার, ১১ জানুয়ারি ২০২৫
২৮ পৌষ ১৪৩১

আগরতলায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদে মুখর রাজনৈতিক দলগুলো

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:১২ এএম

প্রতিবাদী সভা-সমাবেশ অব্যাহত রয়েছে

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে ‘হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি’র হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।

গতকাল মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেছেন, সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে যে হামলা হয়েছে, তা পূর্বপরিকল্পিত বলে আমাদের ধারণা। সহকারী হাইকমিশনের ভেতরে ঢুকে বাংলাদেশের পতাকা নামিয়ে তাতে আগুন দেওয়া এবং ভাঙচুর করা ভিয়েনা কনভেনশনের সুস্পষ্ট বরখেলাপ।
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব জানান, ভারত সরকার ও ভারতীয় জনগণের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে, আপনাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কৌশল হিসেবে বাংলাদেশ নিয়ে ঘৃণার ব্যবহার করলে উভয় দেশের সম্পর্কে দীর্ঘস্থায়ী টানাপোড়েন সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, আমরা আশা করব, নতুন বাংলাদেশের নাগরিকদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার প্রতি ভারতীয়রা শ্রদ্ধাশীল হবেন এবং বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শাসনকালে যেসব নেতা ভারতে অবস্থান করছেন, তাদের ফিরিয়ে দিয়ে বিচারে সহায়তা করবেন।

এদিকে কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ ভারতের বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলার অধিকার থাকতে পারে না বলে মনে করে জামায়াতে ইসলামী। এ হামলার নিন্দা জানিয়ে মঙ্গলবার বিবৃতিতে এমন কথা বলেছেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

হাইকমিশনে হামলা ও পতাকায় আগুনকে ভিয়েনা কনভেনশন, কূটনৈতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থি আখ্যা দিয়ে গোলাম পরওয়ার বলেন, ভারত প্রতিবেশী দেশের কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা দিতে যেখানে ব্যর্থ, সেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দেশ বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলার অধিকার তাদের থাকতে পারে না। বাংলাদেশের জনগণ কারও দাদাগিরি একদম পছন্দ করে না। জনগণকে চোখ-কান খোলা রাখার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্যই বিদেশি আগ্রাসন রুখে দিতে পারে।

এ হামলাকে বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিনষ্টে গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের অংশ বলে জামায়াত মনে করে– এ মন্তব্য করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়– বাংলাদেশের নীতির কথা উল্লেখ করে জামায়াতের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশও বিশ্বের সব দেশের কাছে একই নীতি আশা করে।
বাংলাদেশি কূটনৈতিক ও মিশনের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ভবিষ্যতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জামায়াত।

এলডিপি
হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশে সব মানুষের সমান অধিকার রয়েছে। বাংলাদেশ শান্তির দেশ। এখানে সবাই নিরাপদ। যারা অপপ্রচার করে, তারা বাংলাদেশের মঙ্গল চায় না।

নাগরিক ঐক্য
ত্রিপুরার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে মান্না বলেন, সহকারী হাইকমিশনে যে হামলা হয়েছে, তা বাংলাদেশের ওপর হামলা বলেই বিবেচনা করা যায়। হামলা, ভাঙচুর এবং বাংলাদেশের পতাকার অবমাননা ভিয়েনা কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

গণঅধিকার পরিষদ
রাজধানীর পল্টন মোড়সংলগ্ন গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে ভারতীয় গণমাধ্যমে অপপ্রচার ও সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

জেএসডি
আগরতলায় ধর্মীয় উগ্রবাদীদের আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন অফিসে ঢুকে জাতীয় পতাকা নামিয়ে আগুন দেওয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করার নামান্তর। এ ধরনের পূর্বপরিকল্পিত হামলা দুই দেশের কূটনৈতিক ক্ষেত্রে অপ্রত্যাশিত ঝুঁকি সৃষ্টি করবে।

এবি পার্টি
বাংলাদেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে বলে মন্তব্য করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। ভারতীয় উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার এবি পার্টি আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল-পূর্ব সমাবেশে পার্টির নেতারা বলেছেন, গত সাড়ে ১৫ বছর একটি তাঁবেদার সরকার বসিয়ে ভারত সরকার বাংলাদেশকে একটি করদ-রাজ্যে পরিণত করার প্রয়াস চালিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ কখনও কারও দাসত্ব মেনে নেয়নি। জুলাই বিপ্লবের পর বাংলাদেশে যখন ভারতের করদ-রাজ্য ভেঙে পড়েছে, তখন তাদের মাথা নষ্ট হয়েছে। এখন তারা আমাদের হাইকমিশনগুলোতে আক্রমণ করছে।

সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে বিজয়নগর, কাকরাইল, পল্টনসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়।

ইসলামী আন্দোলন
বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ভারতকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের নেতারা। রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে সমাবেশ থেকে এ দাবি জানান তারা। সমাবেশের পর একটি মিছিল বিজয়নগর ঘুরে ফের পুরানা পল্টন মোড়ে শেষ হয়। মিছিলকারীরা ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।

ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা।

বাম গণতান্ত্রিক জোট
গতকাল পুরানা পল্টনের সিপিবি কার্যালয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের জরুরি সভায় বলা হয়, এই বিদ্বেষের রাজনীতির বিরুদ্ধে দুই দেশের জনগণের সঙ্গে বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তি, দল, সংগঠন ও জনগণের ঐক্য গড়ে তোলা জরুরি। সভায় ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলা ও জাতীয় পতাকা অবমাননাকারীদের শাস্তির দাবিতে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার আহ্বানে আজ বুধবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাম জোটের সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

সিপিবি
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণ এবং গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল শক্তিগুলোকে উভয় দেশের সাম্প্রদায়িক শক্তির পাতা ফাঁদে পা না দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।

অন্যান্য দল
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ আলাদা বিবৃতিতে ভারতের কলকাতা, আগরতলা ও মুম্বাই বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলা-ভাঙচুর এবং জাতীয় পতাকায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির যে কোনো অপতৎপরতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বিবৃতিতে বলেন, এসব উস্কানিমূলক সহিংস তৎপরতার দায়দায়িত্ব ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারকে বহন করতে হবে।

বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ এক বিবৃতিতে বলেন, দেশের জনগণকে যে কোনো ধরনের উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সজাগ ও সতর্ক থেকে সম্প্রদায়গত সম্প্রীতি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

হাইকমিশনে হামলার নিন্দা জানিয়েছে সার্বভৌমত্ব আন্দোলন। মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে দলটি এ নিন্দা জানায়। এতে উপস্থিত ছিলেন সার্বভৌমত্ব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সংগঠক ফরিদ আহমেদ, আল আমিন রাজু, আবদুল্লাহ আল হোসাইন প্রমুখ।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের বিবৃতিতে বলা হয়, এসব অপকর্মের মাধ্যমে ভারতের শান্তিকামী গণতান্ত্রিক জনগণকে পুরো দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জনগণকে চূড়ান্ত ধৈর্য ও সম্প্রীতির পরীক্ষা দিতে হবে।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের বিবৃতিতে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে আগরতলার বাংলাদেশ মিশনে মহলবিশেষের হামলা ও জাতীয় পতাকা অবমাননার ঘটনার নিন্দা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, এ ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত, দুর্ভাগ্যজনক ও নিন্দনীয়।

ভারতের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলা-ভাঙচুর ও জাতীয় পতাকায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আরও বিবৃতি দিয়েছেন গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. ইয়াহিয়া, সাধারণ সম্পাদক হাসান তারিক চৌধুরী, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড, সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ প্রমুখ।

এদিকে, হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে সিলেট জেলা ও নগর বিএনপি। গতকাল সন্ধ্যায় মিছিলটি জিন্দাবাজার হয়ে চৌহাট্টায় গিয়ে শেষ হয়। এদিন বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে রংপুর মহানগর বিএনপি। এদিকে হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে গতকাল রাতে জয়পুরহাট শহরে মশাল মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা।

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর