গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনায় রাষ্ট্রযন্ত্রের হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. নাজিম উদ্দিন আহমেদ। তিনি গণস্বাস্থ্যের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানের উদ্যোগ প্রত্যাশা করেন। একই সঙ্গে এ বিষয়ে সমাজের সচেতন নাগরিকসহ সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্ল
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনায় রাষ্ট্রযন্ত্রের হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. নাজিম উদ্দিন আহমেদ। তিনি গণস্বাস্থ্যের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানের উদ্যোগ প্রত্যাশা করেন। একই সঙ্গে এ বিষয়ে সমাজের সচেতন নাগরিকসহ সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ডা. নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মরহুম ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরীর স্ত্রী শিরিন হক, সরকারের একজন নারী উপদেষ্টা ও ডা. কনা চৌধুরী বৈধ ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য না হয়েও অবৈধভাবে চর দখলের মতো গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র দখল করে রেখেছেন।
তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে দুর্নীতি ও দুষ্ট চক্র রক্ষা করা। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মী কল্যাণ তহবিলের কোটি কোটি টাকা লুটপাট ও বিভিন্ন জমি বিক্রির পাঁয়তারা ও অনেক প্রকল্প বন্ধে এই দুষ্ট চক্র বদ্ধপরিকর।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার যেখানে দুর্নীতিবাজ ও দখলদারদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, সেখানে সরকারের একজন নারী উপদেষ্টার ক্ষমতার অপব্যবহার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে ব্যবহার করে এই ধরনের হস্তক্ষেপ সত্যিই দুঃখজনক, অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। আমাদের কয়েকজন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধার প্রতিষ্ঠিত স্বপ্নের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে দুর্বৃত্ত, দুর্নীতিবাজ, লুটেরা, দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা, একমাত্র জীবিত প্রতিষ্ঠাতা ও বৈধ নিবন্ধিত ট্রাস্টিদের সসম্মানে সাধারণ মানুষের কল্যাণে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র জনহিতকর দাতব্য ট্রাস্ট-এর কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে রাষ্ট্রযন্ত্রের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
’
নিজেকে একমাত্র জীবিত প্রতিষ্ঠাতা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র জনহিতকর দাতব্য ট্রাস্টের ট্রাস্টি উল্লেখ করে ডা. নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের যাত্রা এবং যুদ্ধের সময় বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। যার উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধাহত ও অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলাদেশি উদ্বাস্তু ও স্থানীয় জনগণকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা। প্রতিষ্ঠার চার মাস পর যুদ্ধের সময় কয়েকজন তরুণ চিকিৎসক হাসপাতালে যোগ দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবং ডা. এম এ মুবিন অন্যতম। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল পরবর্তীতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
তৎকালীন সরকার প্রধান এই প্রতিষ্ঠানকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র নামকরণ করে এবং ৩০ একর জমি দান করে। ১৯৭২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর চার সদস্যের সমন্বয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনা করা জন্য চ্যারিটেবল ট্রাস্টের দলিল করা হয়। পরে ১৯৮০ সালে চ্যারিটেবল ট্রাস্ট্রের প্রথম সম্পূরক নথি তৈরি করা হয় এবং দায়িত্ব বণ্টন করা হয়। আশির দশকে এম জাকারিয়া অসুস্থ হয়ে গেলে ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী ও ডা. নাজিম উদ্দীন আহমেদ মানবিক কারণে এম জাকারিয়ার স্ত্রী অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা মায়াকে প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন।’
ডা. নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরীর একক সিদ্ধান্তে আমার অগোচরে স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে এম জাকারিয়ার (ট্রাস্টি সদস্য) বাসভবনে গোপনে একটি কমিশন গঠন করে এবং অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা মায়া এবং ডা. কাশেম চৌধুরীকে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য করেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জীবদ্দশায় ও কতিপয় দুষ্টচক্রের প্রভাবে এবং তার সম্মানের কারণে এই প্রতারণার প্রকৃত সত্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। পরে ২০২৩ সালে ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী মৃত্যুবরণ করলে থলের বিড়াল বের হতে থাকে। বর্তমানে এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্ট্রি ডা. নাজিম উদ্দিন আহমেদ এই প্রতারণার বিরুদ্ধে একটি সিআর মামলা ও একটি দেওয়ানি মোকদ্দমা করেন। যা আদালতে চলমান।’
ডা. নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে কিছু স্বার্থান্বেষী ও প্রতারক চক্র গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে লুটের স্বর্গরাজ্য পরিণত করেছে। তাদের নামে দলিলের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, প্রতিষ্ঠানের গাছ বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ, নারী কেলেংকারি, জাল সনদ দাখিল করে ও শিক্ষাগত যোগ্যতার নামে মিথ্যা উপাধি ব্যবহার করে অর্থ প্রতারণা এবং আইসিইউয়ের নামে অনুদানের অর্থ তসরুপসহ বহু দুর্নীতি ও জালিয়াতির মামলা রয়েছে। তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে একমাত্র বৈধ প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. নাজিম উদ্দীন আহমেদকে ডা. মঞ্জুর কাদির আহম্মেদ, ডা. কাসেম চৌধুরী, ডা. কনা চৌধুরীদের নির্দেশে অপমান করে গত ২৪ আগস্ট যখন দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে সাভার গণস্বাস্থ্য হতে বিতাড়িত হতে বাধ্য করেছেন। গত ১৭ ডিসেম্বর ট্রাস্টি বোর্ডের সব সদস্যের সমন্বয়ে সভা করতে গেলে বর্তমান সরকারের এক নারী উপদেষ্টার নির্দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ট্রাস্ট্রি সদস্যদের বাধা প্রদান করেন, বিভিন্নভাবে ট্রাস্টি সদস্যদের হেনস্তা করেন এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে জোরপূর্বক বের করে দেন।’
মন্তব্য করুন: