ক্যাপ্টেন মোঃ ওমর ফারুক, বীর প্রতীক, ই বেংগল গত ২৭ জুন ১৯৮৬ তারিখে বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমি হতে ১৪ বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদী কোর্সের সাথে কমিশন লাভ করেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩০ ই বেংগল ইউনিটে কর্মরত থাকাকালীন ২০ এপ্রিল ১৯৯১ তারিখে গোপন সুত্রে জানতে পারেন যে, শান্তি বাহিনীর সশস্ত্র গ্রুপের একজন নেতা ঐ দিন দিবাগত রাতে জনতা পাড়া এলাকার কারবারির বাড়ীতে রাত্রী যাপন করবে। তার সাথে মোট ০৩ জন শান্তিবাহ
ক্যাপ্টেন মোঃ ওমর ফারুক, বীর প্রতীক, ই বেংগল গত ২৭ জুন ১৯৮৬ তারিখে বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমি হতে ১৪ বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদী কোর্সের সাথে কমিশন লাভ করেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩০ ই বেংগল ইউনিটে কর্মরত থাকাকালীন ২০ এপ্রিল ১৯৯১ তারিখে গোপন সুত্রে জানতে পারেন যে, শান্তি বাহিনীর সশস্ত্র গ্রুপের একজন নেতা ঐ দিন দিবাগত রাতে জনতা পাড়া এলাকার কারবারির বাড়ীতে রাত্রী যাপন করবে। তার সাথে মোট ০৩ জন শান্তিবাহিনীর সদস্য থাকবে, যাদের সকলের কাছেই অস্ত্র রয়েছে। দলটি প্রায়ই এই এলাকায় আসে এবং অবৈধভাবে চাঁদা সংগ্রহ করে।
সংবাদের গুরুত্ব বিবেচনায় তিনি অতি অল্প সময়ের মধ্যে একটি এ টাইপ টহল দল প্রস্তুত করেন। সেই সাথে টহল দলকে বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত করে তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। ক্যাম্পের সব থেকে চৌকস সেনা সদস্যদের নিয়ে তৈরি করেন স্ট্রাইকিং ফোর্স।
যেহেতু টার্গেট রাত্রি যাপন করবে এবং ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে চলে যাবে, তাই তাদেরকে খুব দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছাতে হবে। চলার পথ ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকার যার ফলে কয়েক ফুট সামনের ব্যক্তিকেই দেখা যাচ্ছিল না। তবুও তারা টর্চ লাইট না জ্বালিয়ে একে অপরের হাত ধরে যেতে থাকে। শুধু একটাই দুশ্চিন্তা, সন্ত্রাসীরা যেন কোনভাবেই পালিয়ে না যায়। ভোরের দিগন্তরেখা সাদা হওয়ার পূর্বেই তাদের লক্ষ্যবস্তুতে যেকোন মূল্যে পৌঁছাতে হবে। অবশেষে রাত ০৩৩০ ঘটিকায় টহল দলটি লক্ষবস্তুর প্রায় ১/২ কিঃমিঃ সন্নিকটে পৌঁছায় এবং ক্যাপ্টেন ফারুক বাইনোকুলার দিয়ে দেখে লক্ষ্যবস্তু সনাক্ত করেন।
ইতিমধ্যে পুরো টহল বেশ ক্লান্ত। সবাই ০৫ মিনিটের বিরতি প্রার্থনা করে। কেউ যেন ঘুমিয়ে না পড়ে এই শর্তে পাঁচ মিনিটের বিরতি দেওয়া হল। দিগন্ত রেখা সাদা হওয়ার সাথে সাথে কারবারীর ঘর নিয়মানুযায়ী ঘেরাও করে তল্লাশী চালানো হয়। কিন্তু দুষ্কৃতিকারীদের পাওয়া গেল না, শুধু পাওয়া গেল একজন পাহাড়ি নারীকে। জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেল যে, ঐ রাতে দুষ্কৃতিকারীরা আসেনি।
দুষ্কৃতিকারীদের না পেয়ে ক্যাপ্টেন ফারুক বিকল্প পথ ধরে নিজ ক্যাম্পে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সকাল ০৬৩০ ঘটিকার দিকে টার্গেট এলাকা ত্যাগ করে বিকল্প পথে তারা যাত্রা শুরু করেন। তীব্র শীতে ছড়ার পানি বরফের মতো ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছিল। প্রায় ২/৩ কি: মি: আসার পর ক্যাপ্টেন ফারুকের মনে সন্দেহের উদ্রেগ হলো। তিনি পুরো টহল দলকে আরো সতর্কতার সাথে পথ চলতে বললেন। চলার পথে পাহাড়ের বাঁক ঘুরার সাথে সাথেই ঘন কুয়াশায় কিছু জলপাই রং এর পোষাক এবং লোকজনের চলাফেরা দেখা গেল। এ সময় তিনি প্রথম স্কাউটকে পজিশনে থেকে পর্যবেক্ষন করার নির্দেশ দিলেন। এরপর পেছনের সমস্ত টহল দলকে যার যার পজিশনে তৈরি হওয়ার জন্য আদেশ দিলেন। স্কাউটদ্বয়কে পজিশনে রেখে পাহাড়ের রিভার্স স্লোপের আড়াল থেকে উঁকি দিয়ে তিনি দুষ্কৃতিকারীদের অবস্থান লক্ষ্য করলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন ক্রলিং করে অতি সাবধানে তাদের আরও কাছে গিয়ে আক্রমণ করবেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্যাপ্টেন ফারুক এবং ল্যাঃ কর্পোরাল হানিফ ক্রলিং করে তাদের কাছাকাছি যাওয়ার জন্য অগ্রসর হতে থাকেন। তবে শুকনো ঘাস ও লতা-পাতার খস খস আওয়াজে দুষ্কৃতিকারীরা সতর্ক হয়ে গেল এবং টহলের ওপর ফায়ার করলো।
টহল দলও দ্রুত ফায়ার ব্যাক করলে একজন দুষ্কৃতিকারী মৃত্যুবরণ করে এবং বাকিরা দৌঁড়ে পালাতে থাকে। ক্যাপ্টেন ফারুক তখন তাদের পেছনে ফায়ার করতে করতে দৌঁড় দিলেও মুহূর্তেই ঘন জঙ্গলে তারা লুকিয়ে যায়। হঠাৎ পেছনে ফিরে ক্যাপ্টেন ফারুক দেখতে পান আহত একজন শান্তিবাহিনীর দুষ্কৃতিকারী এসএমজি তুলে তাকে পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জে গুলি করার জন্য উদ্যত হচ্ছে। ক্যাপ্টেন ফারুক সাথে সাথে তার অস্ত্র কেড়ে নেন এবং গ্রেফতারপূর্বক ক্যাম্পে নিয়ে আসেন। এরপর চট্টগ্রাম সেনানিবাসের হাসপাতালে আটককৃত দুষ্কৃতিকারীকে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে জানা যায় তিনি শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র গ্রুপের একজন উচ্চ পদস্থ নেতা।
পরবর্তীতে ১৫ আগস্ট ১৯৯১ তারিখে তৎকালীন মহামান্য রাষ্ট্রপতি ক্যাপ্টেন মোঃ ওমর ফারুক'কে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করেন।
(চলবে)
মন্তব্য করুন: