ajbarta24@gmail.com সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
৮ পৌষ ১৪৩১

লেফটেন্যান্ট (পরবর্তীতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল) মোঃ আজিজুর রহমান খাঁন, বীর প্রতীক

স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রামে বীর সেনানিদের বীরত্বগাঁথা (পর্ব-৫)

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:১২ এএম
আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ৯:০২ এএম

ছবি, ফেসবুক থেকে

লেফটেন্যান্ট মোঃ আজিজুর রহমান খাঁন, বীর প্রতীক, ইবি গত ১০ জুন ১৯৮৩ তারিখে বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমি হতে ৮ম বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদী কোর্সের সাথে কমিশন লাভ করেন। তিনি ৪ ই বেংগল ইউনিটের ডি কোম্পানীর অধিনায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

লেফটেন্যান্ট মোঃ আজিজুর রহমান খাঁন, বীর প্রতীক, ইবি গত ১০ জুন ১৯৮৩ তারিখে বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমি হতে ৮ম বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদী কোর্সের সাথে কমিশন লাভ করেন। তিনি ৪ ই বেংগল ইউনিটের ডি কোম্পানীর অধিনায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ০২ অক্টোবর ১৯৮৪ তারিখ আনুমানিক ১০০০ ঘটিকায় দিঘীনালা জোন সদর জানতে পারে যে, শান্তিবাহিনীর ১০/১২ জনের একটি অস্ত্রধারী গ্রুপ সাধারন এলাকা ছাতক ছড়াতে যাচ্ছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে জোন অধিনায়ক দিঘীনালা জোন হতে লেঃ মোঃ নুরে আজাদ এর নেতৃত্বে একটি পেট্রোল বাহির করেন এবং বরাদম আর্মি ক্যাম্প হতে অপর একটি পেট্রোল লেঃ মোঃ আজিজুর রহমান খাঁন এর নেতৃত্বে বাহির হয়। পরবর্তীতে ৪ অক্টোবর ১৯৮৪ তারিখ আনুমানিক দুপুর ১২টার দিকে সেনাবাহিনীর পেট্রোল অগ্রসর হতে থাকে শান্তিবাহিনীর অবস্থানের উপর রেইড পরিচালনার জন্য। উল্লেখ্য, লেফটেন্যান্ট আজিজের টার্গেট এলাকাটি ছিল পাহাড়ের পাদদেশে একটি খোলা ভূমি এবং তার পশ্চিম দিকে ছিল মাইনি নদী। সেই এলাকাটিতে একসময় সেনাবাহিনীর ক্যাম্প ছিল যা কৌশলগত কারণে সরিয়ে আনা হয়েছিল। তাই ঐ এলাকাটিকে তখন শান্তিবাহিনী নিরাপদ মনে করত।

মুষলধারে চলমান বৃষ্টির মধ্যে লেঃ মোঃ আজিজুর রহমান খাঁন এর পেট্রোল নদী পাড় হয়ে পাহাড়ের পাদদেশে পৌছায়। এসময় অপারেটর আজহার বলে "স্যার বৃষ্টি হচ্ছে তাই শান্তিবাহিনীর গণলাইন কাজ নাও করতে পারে। ভাগ্য ভালোও হতে পারে।" তার তখন মনে পড়ল বিএমএ রেইড ক্লাসের কথা। প্লাটুন কমান্ডার বলেছিলেন, "Inclement weather is better for raid", ঠিক এসময় পেছন থেকে সুবেদার ইউসুফ বেতারে জানালো তারা ৪/৫ জন যাত্রাপথে বেশ কিছুটা পিছনে পড়েছে। তাই টহল দলটি একটি জায়গায় অপেক্ষা করে এবং পেছনে পরা সেনাসদস্যগণ যোগদান করলে পুনরায় যাত্রা শুরু করে। বেলা ১৪০০ ঘটিকায় হঠাৎ করে ব্যাটালিয়ন সদর হতে ফেরত চলে আসার আদেশ আসে। এসময় একটু সামনে এগোতেই কড়ইতলী এলাকায় একটি ডিফাইলের কাছাকাছি ৩/৪ জন অস্ত্রধারী শান্তিবাহিনী প্রায় ১০/১৫ গজের মধ্যে দেখতে পান লেঃ মোঃ আজিজুর রহমান খাঁন। এ সময় শান্তিবাহিনীর একজন অস্ত্রধারী দুষ্কৃতিকারী তার দিকে রাইফেল তাক করে। তিনি মুহূর্তেই মাটিতে শুয়ে পরে সিঙ্গেল রাউন্ড ফায়ার করেন, যা দুষ্কৃতিকারীর বুকে লাগে।

এসময় অন্যান্য দুষ্কৃতিকারীরা ডিফাইলের ওপর পাড় হতে জাম্প করে সামনে আসতে গিয়ে পড়ে যায়। তিনি তৎক্ষণাৎ সাব-মেশিনগানের (এসএমজি) চেঞ্জ লিবার পরিবর্তন করে Burst Fire করেন। এতে ২ জন ঘায়েল হয় এবং ১ জন জঙ্গলে পালিয়ে যায়। লেঃ আজিজ তখন তার পিছু ধাওয়া করে। কিন্তু কোনভাবেই তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। হঠাৎ তিনি মাটিতে রক্তের দাগ দেখে একশো গজ এগিয়ে গেলে দেখতে পান ৩য় জন আহত অবস্থায় পড়ে আছে। এসময় তিনি আহত দুষ্কৃতিকারীকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান পূর্বক আটক করেন। তার দৃঢ় নেতৃত্বে উক্ত অপারেশনে ২জন শান্তিবাহিনী ঘায়েল হয় এবং একজন আহত হয়। এছাড়াও শান্তিবাহিনীর নিকট হতে ৩টি অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং বেশকিছু সরঞ্জামাদি উদ্ধার করে।
পরবর্তীতে ৩০ নভেম্বর ১৯৮৬ তারিখে তৎকালীন মহামান্য রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান্ট মোঃ আজিজুর রহমান খাঁন'কে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করেন।

(চলবে)

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর