লেঃ এ কে এম আহসানুল হক, বীর বিক্রম, ই বেংগল ৩০ নভেম্বর ১৯৭৬ তারিখে বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমি হতে এসএসসি-৩ কোর্সের সথে কমিশন লাভ করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে ১২ ই বেংগল এ কর্মরত থাকাকালীন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ২৫ আগষ্ট ১৯৭৮ তারিখ সকাল ০৭৩০ ঘটিকায় তার নেতৃত্বে ক্যাম্প হতে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার লংগদু উপজেলার মায়েন্দা ছাড়ার উদ্দেশ্যে একটি টহল (৫০ সদস্যের) বের হয়। সেদিন বৈরী আবহাওয়া কারণে একদিক
লেঃ এ কে এম আহসানুল হক, বীর বিক্রম, ই বেংগল ৩০ নভেম্বর ১৯৭৬ তারিখে বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমি হতে এসএসসি-৩ কোর্সের সথে কমিশন লাভ করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে ১২ ই বেংগল এ কর্মরত থাকাকালীন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ২৫ আগষ্ট ১৯৭৮ তারিখ সকাল ০৭৩০ ঘটিকায় তার নেতৃত্বে ক্যাম্প হতে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার লংগদু উপজেলার মায়েন্দা ছাড়ার উদ্দেশ্যে একটি টহল (৫০ সদস্যের) বের হয়। সেদিন বৈরী আবহাওয়া কারণে একদিকে যেমন হেলিকপ্টার দ্বারা রেশন পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছিল না অপরদিকে ক্যাম্পে ফেরত আসাও ছিল অসম্ভব।
সেইদিন সিপাহী চৌধুরী শেখ ছিল লেঃ আহসান এর অবস্থানের পাশের ডিউটি পোস্টের এলএমজি ম্যান। হঠাৎ সিপাহী চৌধুরী শেখ তার ১০ গজ সামনে জংগলের মধ্যে কিছু একটা নড়াচড়ার শব্দ পান। তিনি তখন "থাম, হাত উপর" বললে শান্তি বাহিনী অতর্কিত ফায়ার করে। সাথে সাথেই তিনি গুরুতর আহন হন এবং পরবর্তীতে শহিদ হন। ঘটনাচক্রে ক্যাম্পের লোকজন ঘুম থেকে জেগে ওঠে এবং অস্ত্র নিয়ে পজিশনে যেতে না যেতেই আরোও কয়েকজন আহত হয়।
ইতিমধ্যেই লেঃ এ কে এম আহসানুল হক ও তার রানার সিপাহী তোফাজ্জল অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেন। তিনি শান্তি বাহিনীর অবস্থান এবং পরিস্থিতি বোঝার চেস্টা করছিলেন এবং সবাইকে আঁড় নিয়ে ফায়ার করার নির্দেশ দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে তাঁর বুকে এক ঝাঁক বুলেট বিদ্ধ হলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এসময় নায়েক আজিম ও সিপাহী তোফাজ্জল তাকে দেখতে পেয়ে একটি বড় গাছের আড়ালে টেনে নিয়ে আসেন। অতঃপর শান্তি বাহিনী মেগাফোন দিয়ে বাংলা ভাষায় বলতে থাকে "বিডিআর ভাই তোমরা স্যারেন্ডার করো আমরা তোমাদের কোন ক্ষতি করবোনা। তোমাদেরকে ফারুয়ায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করবো"। তখন লেঃ আহসান বলতে থাকেন "তোমরা স্ট্রাইকিং টুয়েলভ এর সদস্য, এক বিন্দু রক্ত থাকতে স্যারেন্ডার করোনা, তোমরা ওদের দিকে ফায়ার করো, ওদের অবস্থান দেখে এ্যাসল্ট করো"।
কমান্ডারের আদেশ পেয়ে ১০ নং প্লাটুনের সিপাহী আবু তাহের শান্তি বাহিনীর উদ্দেশ্যে বলে "আমরা বিডিআর নই, আমরা সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী স্যারেন্ডার করেনা, যুদ্ধ করে"।
এরপর ল্যান্স নায়েক বারী গাছের আড়ালে গিয়ে মর্টার ফায়ারের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় একটি গুলি তার পায়ে বিদ্ধ হলে তিনি আহত হন। একই সময় নায়েক আজিম ক্রলিং করে গাছের আঁড় নিয়ে শান্তিবাহিনীর উপর ফায়ার করতে থাকে। এক পর্যায়ে সে দেখতে পায় ক্যাম্পের উত্তর পূর্ব এবং দক্ষিণ দিকে মাটিতে পড়া বড় বড় গাছের পাশে সারিবদ্ধ শান্তি বাহিনী অবস্থান নিয়েছে। তখন সে মর্টার এবং জিএফ রাইফেল ফায়ার করার জন্য চিৎকার করতে থাকে। ইতিমধ্যে সুবেদার শাহ আলম দুটি হ্যান্ড গ্রেনেড ছুঁড়লে দক্ষিণ দিকে শত্রু গ্রেনেডের শব্দে এলাকা ছেড়ে চলে যায়। ততক্ষণে হাবিলদার মুসলিম এসে ল্যান্স নায়েক বারির মর্টারের নিকট অবস্থান নেয় ও গোলা ছুঁড়তে থাকে। এক পর্যায়ে নরম মাটিতে মর্টারের বেসপ্লেট ঢুকে গেলে মর্টার ফায়ারের অনুপাযোগী হয়ে পরে। তখন সিপাহী আতিয়ার ফকির মর্টারকে টেনে উঠানোর চেষ্টা করার সময় শত্রুর একটি বুলেট লেগে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সিপাহী নাসির ততক্ষণে লেঃ আহসানের ঘর থেকে সিগন্যাল সেট বের করে আনতে সক্ষম হয়। তখন নায়েক আযিম নিকটতম সকল ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে রেডিওতে বলতে থাকেন "আমাদের সাহায্য করুন। আমরা মায়েন্দা ছাড়ার শান্তি বাহিনীর কবলে পড়েছি। আমাদের অনেক লোক আহত ও শহিদ হয়েছে। দ্রুত হেলিকপ্টার এর ব্যবস্থা করুন"। এসময় সিপাহী রেজাউল এবং সুবেদার শাহ আলম ১০ প্লাটুনের দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয়ে গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে শত্রুর এলএমজির ফায়ারে সিপাহী রেজাউল এর পা হারায়। দুই পক্ষের ঘাত-প্রতিঘাতে রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে যায়। এক পর্যায়ে প্রচন্ড আক্রমণের মাঝে শান্তি বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়।
পরদিন সাহায্যকারী পেট্রোল এবং হেলিকপ্টার এসে সকল আহত ও শহিদদের চট্টগ্রাম সিএমএইচ নিয়ে যায়।
সেদিন লেঃ আহসান তার নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও বিন্দুমাত্র ভীত হননি। তিনি তার অধীনস্থদেরকে আত্মসমর্পন না করে শান্তিবাহিনীকে প্রতিহত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার এই আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালনের জন্য গত ০২ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮ এর কালো রাত্রিতে অধীনস্থ সেনাসদস্যগণ জীবন বাজি রেখে প্রতিরোধ গড়েছিলো। সেদিন সাহসিকতা, সম্মান ও গৌরবের যে উদাহরণ উক্ত টহল দলের সৈনিকগণ দেখিয়েছিলেন তা প্রত্যেক সেনা সদস্যকে সর্বদা অনুপ্রাণিত করবে।
পরবর্তীতে ০৩ আগষ্ট ১৯৭৯ তারিখে তৎকালীন মহামান্য রাষ্ট্রপতি এই বীর যোদ্ধাকে বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করেন।
(চলবে)
মন্তব্য করুন: