দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধীরে ধীরে বাড়ছে। গত মঙ্গলবার দিন শেষে মোট রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী গ্রস রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার।
এর আগে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির দায় বাবদ ১৭৫ কোটি ডলার পরিশোধের পর গত ৯ মার্চ রিজার্ভ নেমেছিল ১৯ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারে। মূলত অর্থ পাচার কমে যাওয়ায় বৈধ পথে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি এবং রপ্তানিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির কারণেই রিজার্ভ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হুন্ডি ও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে সহায়তা দেওয়ার কারণে প্রতি মাসেই কমেছিল। দেশের ইতিহাসে ২০২২ সালের আগস্টে রিজার্ভ উঠেছিল সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলারে। সেখান থেকে প্রতি মাসে কমতে কমতে সরকার পতনের আগে গত জুলাই শেষে তা ২০ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল। তবে সরকার পতনের পর আর রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার বিক্রি করছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। উল্টো ব্যাংকগুলো থেকে রিজার্ভ কিনছে।
জানা গেছে, বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গত বছরের নভেম্বরে মেয়াদোত্তীর্ণ স্বীকৃত বিলের পরিমাণ ছিল ৫২ কোটি ডলার। এর মধ্যে বৈদেশিক স্বীকৃত বিল ২০ কোটি ও স্থানীয় বিল ৩২ কোটি ডলার। গত জানুয়ারির শেষে মেয়াদোত্তীর্ণ স্বীকৃত বিলের পরিমাণ কমে হয় ২৪ কোটি ডলার। এর মধ্যে বৈদেশিক স্বীকৃত বিল ৯ কোটি ও স্থানীয় বিল ১৫ কোটি ডলার।
প্রবাসীদের পাঠানো আয় আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। গত মার্চ মাসে ৩২৯ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় আসে, এক মাসের হিসাবে যেকোনো সময়ের চেয়ে এটি বেশি। ফলে ব্যাংকগুলো উদ্বৃত্ত ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করছে। ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনলে আর বিদেশি ঋণ ও অনুদান এলেই কেবল রিজার্ভ বাড়ে। এতে বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর তথ্য অনুযায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মার্চ মাসে রপ্তানি গত বছরের একই মাসের তুলনায় ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান আমার দেশকে বলেন, আমদানির তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে। ব্যাংকগুলো এখন অনেক যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে এলসি খুলছে, যাতে ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার না হয়। আবার গত মাসে প্রবাসী আয়ে রেকর্ড হয়েছে। এ ছাড়া প্রবাসীরা আগে হুন্ডির মাধ্যমে যে অর্থ পাঠাতেন, সেটা এখন করছেন না। তার নিজ উদ্যোগে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। এতে বর্তমান সরকারের ভূমিকাও রয়েছে। কারণ সরকার থেকে মেসেজ দেওয়া হয়েছেÑ প্রবাসীদের পরিবারকে যদি হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠায়, তাহলে জমি কেনার ক্ষেত্রে অর্থ কোথা থেকে পেয়েছে তা জানতে চাওয়া হবে। এর কারণে প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স না পাঠিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠাচ্ছেন। ফলে রিজার্ভ ধীরে ধীরে বাড়ছে।
শাহাজালাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ বলেন, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধি এবং হুন্ডি কমার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে। তবে এখনো ডলারের ওপর চাপ আছে। আমাদের বিদেশি ঋণ অনেক বেড়েছে। সেটি পরিশোধের চাপ রয়েছে। এসব চাপের পরও যে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে না, এটা ইতিবাচক দিক। আগামী মাসে আবার দেড় বিলিয়ন ডলারের মতো আকু পেমেন্ট আছে। আবার রিজার্ভ কমবে। তবে আগে যে অর্থে রিজার্ভ কমত, সে অর্থে কমে না।
তিনি বলেন, আগামীতে আমাদের রপ্তানি আয় আরো বাড়তে থাকবে। একই সঙ্গে কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে রেমিট্যান্সও বাড়বে। আমাদের ডলার রেট যেভাবে বাড়ছিল সেটা এখন স্থিতিশীল রয়েছে। এটাও একটা ভালো দিক।
সোর্স: আমার দেশ
মন্তব্য করুন: